Warning: Trying to access array offset on value of type bool in /home/htmain/public_html/wp-content/plugins/elementor-pro/modules/dynamic-tags/tags/post-featured-image.php on line 36

Warning: Trying to access array offset on value of type bool in /home/htmain/public_html/wp-content/plugins/elementor-pro/modules/dynamic-tags/tags/post-featured-image.php on line 36

Warning: Trying to access array offset on value of type bool in /home/htmain/public_html/wp-content/plugins/elementor-pro/modules/dynamic-tags/tags/post-featured-image.php on line 36

Warning: Trying to access array offset on value of type bool in /home/htmain/public_html/wp-content/plugins/elementor-pro/modules/dynamic-tags/tags/post-featured-image.php on line 36

রাষ্ট্র থেকে ধর্মকে কি আলাদা করা সম্ভব?


Warning: Trying to access array offset on value of type bool in /home/htmain/public_html/wp-content/plugins/elementor-pro/modules/dynamic-tags/tags/post-featured-image.php on line 36

মোহাম্মদ আসাদ আলী
একটি টেলিভিশন চ্যানেলের টকশোতে একজন নিরাপত্তা বিশ্লেষক বললেন, ধর্মকে রাষ্ট্র থেকে সম্পূর্ণভাবে মুক্ত করতে হবে। ধর্ম থাকবে মনের ভেতরে এবং মসজিদের মত পবিত্র জায়গায়। তাই রাষ্ট্রীয় অঙ্গনে ধর্মের প্রবেশ নিষিদ্ধ করতে হবে। তাহলেই নাকি অসাম্প্রদায়িক চেতনার বাংলাদেশ গড়া সম্ভব হবে। কোনোভাবে অসাম্প্রদায়িক চেতনার বাংলাদেশ যদি গড়া যায় তাতে আমার আপত্তি থাকার কথা নয়। আমিও চাই এমন একটি সমাজ, এমন একটি জাতি, যেখানে ধর্মের ভিত্তিতে কোনো ভেদাভেদ থাকবে না, ঘৃণা ও বিদ্বেষের চর্চা হবে না। সকল ধর্মের মানুষ সম-অধিকার ও মর্যাদা নিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে বেঁচে থাকবে। কিন্তু একটি বিষয় আমার বুঝে আসে না ধর্মকে রাষ্ট্র থেকে আলাদা করা হবে কীভাবে?
সেক্যুলার রাষ্ট্রব্যবস্থার ধারণা প্রথম গৃহীত হয় ইউরোপে ষোড়শ শতাব্দীতে। আর আমাদের উপমহাদেশে তা আমদানি হয় ঔপনিবেশিক আমলে, ইংরেজদের মাধ্যমে। সেই ষোড়শ শতাব্দী থেকে আজকের দিনটি পর্যন্ত রাষ্ট্র থেকে ধর্মকে পৃথক রাখার প্রচেষ্টা কিন্তু কম হয় নি। মনে করা হয়েছিল রাষ্ট্রটা ধর্মমুক্ত করে ফেলতে পারলেই ধর্ম কোণঠাসা হয়ে পড়বে সমাজ ও ব্যক্তিজীবনে। তারপর সময়ের সাথে সাথে পুরোপুরি হারিয়ে যাবে। তা যে হয়নি, বরং বর্তমানে ধর্মনিরপেক্ষতাই যে কোনঠাসা অবস্থায় উপনীত হয়েছে, আর ধর্ম রূপ নিয়েছে পৃথিবীর এক নম্বর ইস্যুতে তা বলাই বাহুল্য। আজকে ইউরোপের প্রত্যেকটি রাষ্ট্র ধর্ম ইস্যুতে উন্মাতাল। জ্বলছে সমগ্র মধ্যপ্রাচ্য। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে ক্ষমতায় বসেছে ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দল। আর যে আমেরিকা সারা বিশ্বের মানুষকে মানবাধিকার ও ধর্মনিরপেক্ষতার ছবক দিয়ে বেড়াত, সে দেশের রাজনীতিতে সাম্প্রদায়িকতা এখন বড় অনুঘটকে পরিণত হয়েছে। অর্থাৎ গত চারশ’ বছরের প্রচেষ্টা কার্যত নিষ্ফল হয়েছে এ কথা বলাই যায়। এর কারণ কী?
আসলে সেক্যুলারিজমের তত্ত্ব সফল করতে হলে মানুষকে পুরোপুরি ধর্মহীন করে ফেলতে হবে। কিন্তু মানুষকে ধর্মহীন করার প্রচেষ্টা সফল হবার নয়। কারণ দেহ-আত্মার সমন্বয়ে মানুষ। দেহের চাহিদা পূরণ করাই তাই যথেষ্ট নয়, তার আত্মিক চাহিদাও পূরণীয়। যুগ যুগ ধরে মানুষের এই আত্মিক চাহিদা পূরণ করে আসছে ধর্ম। আমাদের ভারতবর্ষের কথাই ধরা যাক। এখানকার মানুষের রক্তের কণিকায় মিশে আছে ধর্মবিশ্বাস। তাদের চিন্তা-চেতনা ধর্মকেন্দ্রিক। তারা উপোস থেকে দিনের পর দিন কাটাতে পারে, কিন্তু ধর্মবিশ্বাস ছাড়তে পারে না। এখানকার সংস্কৃতি, রীতি-নীতি, প্রথা-পরম্পরা, ইতিহাস-ঐতিহ্য সবকিছুর সাথে ওতোপ্রোতভাবে ধর্ম জড়িয়ে আছে। প্রাগৈতিহাসিক আমল থেকে তারা ধর্মের অনুশাসন মেনে অভ্যস্ত। পাশ্চাত্যের মানুষগুলোর মত তারা পার্থিব উন্নতিকেই জীবনের একমাত্র সফলতা মনে করে না। জীবনযাত্রার মানোন্নয়নই তাদের শেষ কথা নয়। পাশ্চাত্যের গর্বের বিষয় যদি হয় আধুনিক প্রযুক্তি, প্রাচ্যের গর্বের বিষয় তাদের হাজার বছরের ঐতিহ্যবাহী ধর্মাদর্শ। তাদের কাছে দুনিয়ার চেয়ে পরকাল দামী। তারা স্রষ্টার সান্নিধ্য চায়, আত্মার পরিতৃপ্তি চায়। ধর্ম তাদের এই চাহিদা পূরণ করে, আত্মিক ও মানসিক প্রশান্তি দান করে। এ কারণে কয়েক শতাব্দীর প্রচেষ্টা সত্তে¡ও এখানকার সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের ধর্মবিশ্বাসে এতটুকু চিড় ধরে নি। উল্টো সেক্যুলারিজমের হালে পানি নেই আজ।
রাষ্ট্র চালায় জনপ্রতিনিধিরা। আর জনপ্রনিধি নির্বাচন করে ভোটাররা। ভোটার কারা? ধর্মবিশ্বাসী মানুষগুলোই হচ্ছে ভোটার। সেই ভোটারদেরকে মই হিসেবে ব্যবহার করে ক্ষমতায় যাবার স্বপ্ন দেখে ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলগুলো। মানুষের ধর্মীয় সেন্টিমেন্ট ব্যবহার করে প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করা হয়। একই ধর্মনিরপেক্ষ সিস্টেমের অধীনে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করা ও নির্বাচনে অংশ নেওয়া সত্তে¡ও ধর্মভিত্তিক দলগুলো খাঁটি মো’মেন বনে যায়, আর অন্যান্য দলগুলোকে বলা হয় কাফের। তারা অন্যান্য ধর্মনিরপেক্ষ দলগুলোর মতই হরতাল, অবরোধ, জ্বালাও, পোড়াও, ভাঙচুর করে তার নাম দেন জিহাদ, আর ভোটযুদ্ধের ব্যালট পেপারকে বলেন জান্নাতের টিকিট। অর্থাৎ যে ধর্মকে রাষ্ট্র থেকে পরিত্যাগ করে মানুষের ব্যক্তিগত জীবনে নির্বাসন দেয়া হয়েছিল তা আর ব্যক্তিগত জীবনে থাকল না। রাষ্ট্র যখন ধর্মকে অবজ্ঞা করে দূরে সরিয়ে দিল, সেটাকে লুফে নিল ধর্মব্যবসায়ীরা। রাষ্ট্র যখন মানুষের ধর্মবিশ্বাসকে সঠিক খাতে কাজে লাগাল না, ধর্মব্যবসায়ীরা তখন সেটাকে নিজেদের স্বার্থোদ্ধারের মাধ্যম বানিয়ে নিল। মানুষ ধর্মের জন্য জীবন দিতে প্রস্তুত। মানুষের ঈমান এক বড় শক্তি। সেই মহাশক্তিটি উঠে গেল একটি সুবিধাবাদী গোষ্ঠীর হাতে। আজ পর্যন্ত ধর্মের নামে যত দাঙ্গা-হাঙ্গামা হয়েছে, নিরীহ মানুষের রক্ত ঝরেছে, সবকিছুর নাটের গুরু ছিল এই গোষ্ঠী। তারা বিভিন্ন ইস্যুতে ইত্তেজনার পারদ চড়ায়, ইসলাম গেল ইসলাম গেল জিগির তুলে মানুষকে উন্মাদনায় মাতায়, জ্বালাও-পোড়াও-ভাঙচুর করে, পুলিশের সাথে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়, তবু রাষ্ট্র তাদেরকে তোয়াজ করে চলতে বাধ্য হয় কারণ ঐ ঈমান নামক মহাশক্তি তাদের হাতে। তাহলে রাষ্ট্র ধর্মনিরপেক্ষ থাকতে পারল কি?
আবার যারা সেক্যুরিজমে বিশ্বাসী বলে নিজেদের দাবি করেন তাদেরকে কিন্তু দিনশেষে ধর্মবিশ্বাসী মানুষের কাছেই যেতে হয়। মানুষের নার্ভ বুঝতে হয়। জনগণকে বোঝাতে হয় আমরা ধর্মের বিপক্ষের শক্তি নই, আমরাও ধর্ম মানি। এই যে আমরা নামাজ পড়ছি, হজ্বে যাচ্ছি, ইজতেমার মুনাজাতে অংশ নিচ্ছি, পীরের মাজারে যাচ্ছি, কোর’আন তেলাওয়াত করছি ইত্যাদি। নেতার ধর্মকর্মের ছবি প্রচার করেন কর্মীরা। ধর্মবিশ্বাসী মানুষের সাথে ধার্মিকতার এই অভিনয় না করলে তারা ভোট পাবেন না। কারণ তাদের বিরুদ্ধে ধর্মভিত্তিক দলগুলো তো কাফের, নাস্তিক ফতোয়া দিয়েই রেখেছে। এই ফতোয়ার আঘাত থেকে রক্ষা পাবার জন্য তারা কেউ রাষ্ট্রধর্ম ঘোষণা করেন, কেউ সংবিধানে আল্লাহর নাম লেখেন, কেউ মসজিদ-মাদ্রাসা নির্মাণ করেন। সেক্যুলার রাজনৈতিক দলের স্থানীয় পর্যায়ের নেতারা মসজিদ-মাদ্রাসা-মন্দির কমিটির সভাপতি হন, সদস্য হন। তাহলে রাষ্ট্রকে ধর্মের বাইরে রাখা গেল কি?
সত্য হচ্ছে- রাষ্ট্র থেকে ধর্মকে পৃথক করা যায় নি, যাবেও না। মাঝখান থেকে সাধারণ মানুষ কেবল প্রতারিত হচ্ছে। প্রতারিত হচ্ছে ধর্মভিত্তিক ও ধর্মনিরপেক্ষ উভয়পক্ষের কাছেই। এই প্রতারণার ইতি টানতে হবে এখন। মানুষকে ধর্মের প্রকৃত শিক্ষা দিতে হবে। তাদের ঈমানকে আর ভুল খাতে প্রবাহিত হতে দেওয়া যাবে না। ঈমান নামক মহাশক্তিকে ফেলে রাখা উচিত হবে না। মানুষের ঈমানকে আর খাটো করে দেখার অবকাশ নেই, অবজ্ঞা করার সুযোগ নেই। ঈমানকেও রাষ্ট্রের কল্যাণে, মানবতার কল্যাণে কাজে লাগাতে হবে।
ধর্ম এসেছে মানুষের কল্যাণের জন্য। যারা ধর্মকে ব্যবহার করে অর্থনৈতিক-রাজনৈতিক ইত্যাদি স্বার্থ হাসিল করে, অকল্যাণ ঘটায়, মানবতার ক্ষতি করে তারা যে ধর্মের পক্ষশক্তি নয় সেটা সাধারণ মানুষের সামনে পরিষ্কারভাবে তুলে ধরতে হবে। মানুষ আল্লাহর খলিফা। আল্লাহ যেমন সারা সৃষ্টিজগতকে শান্তিপূর্ণ ও সুশৃঙ্খলভাবে পরিচালিত করেন, মানুষের দায়িত্ব হচ্ছে তেমনি শান্তিপূর্ণভাবে পৃথিবীকে পরিচালনা করা। এটাই মানুষের এবাদত। কাজেই যে কাজে, যে কথায়, যে আচরণে, যে সিদ্ধান্তে সমাজের শান্তি নষ্ট হয়, মানবতা ক্ষতিগ্রস্থ হয় সে কাজ ইসলামের কাজ হতে পারে না- এই বোধ সাধারণ ধর্মবিশ্বাসী মানুষের মধ্যে জাগ্রত করতে হবে। এইযে এতকিছু করতে হবে, এই দায়িত্ব কিন্তু রাষ্ট্রেরই। আমরা হেযবুত তওহীদ আমাদের সাধ্য মোতাবেক চেষ্টা করছি মানুষকে ধর্মের প্রকৃত শিক্ষা দিতে। এখন রাষ্ট্রকেও এগিয়ে আসতে হবে। রাষ্ট্র যদি এখনও ধর্মকে অবজ্ঞা করে দূরে সরিয়ে রাখে তাহলে রাষ্ট্রেরও ক্ষতি ধর্মেরও ক্ষতি। আর যদি ধর্মের প্রকৃত শিক্ষা দিয়ে ধর্মবিশ্বাসী জনগণকে যাবতীয় ন্যায় ও সত্যের পক্ষে ঐক্যবদ্ধ করতে পারে তাহলে রাষ্ট্রেরও লাভ, ধর্মেরও লাভ। তখন রাষ্ট্রকে আর ধর্মবিশ্বাসী মানুষ নিয়ে চিন্তিত থাকতে হবে না, ধর্মবিশ্বাসী মানুষও রাষ্ট্রকে শত্রু মনে করবে না। রাষ্ট্র ও ধর্ম উভয়েরই লক্ষ্য হবে মানবতার কল্যাণ।

সার্চ করুন

যুক্ত হোন আমাদের ফেসবুক পেজের সাথে...