Warning: Trying to access array offset on value of type bool in /home/htmain/public_html/wp-content/plugins/elementor-pro/modules/dynamic-tags/tags/post-featured-image.php on line 36

Warning: Trying to access array offset on value of type bool in /home/htmain/public_html/wp-content/plugins/elementor-pro/modules/dynamic-tags/tags/post-featured-image.php on line 36

Warning: Trying to access array offset on value of type bool in /home/htmain/public_html/wp-content/plugins/elementor-pro/modules/dynamic-tags/tags/post-featured-image.php on line 36

Warning: Trying to access array offset on value of type bool in /home/htmain/public_html/wp-content/plugins/elementor-pro/modules/dynamic-tags/tags/post-featured-image.php on line 36

‘মাওলানা’ শব্দের সঠিক ব্যবহার


Warning: Trying to access array offset on value of type bool in /home/htmain/public_html/wp-content/plugins/elementor-pro/modules/dynamic-tags/tags/post-featured-image.php on line 36

রিয়াদুল হাসান:
আন্তা মাওলনা ফানসুর না আলাল কাওমিল কাফেরীন (সুরা বাকারা ২৮৬)। এ আয়াতটির অর্থ হচ্ছে, আপনিই আমাদের প্রভু (মাওলানা)! আপনি আমাদেরকে কাফেরদের বিরুদ্ধে সহযোগিতা করুন। পবিত্র কোর’আনে যত স্থানে মাওলানা শব্দটি এসেছে সেটি আল্লাহ-কে বোঝানোর জন্যই ব্যবহৃত হয়েছে। কিন্তু বর্তমানে আমাদের সমাজে আমরা ‘মাওলানা’ বলতে আল্লাহকে বুঝি না, আলেম ওলামাদেরকে বুঝে থাকি।
যে নামটি আল্লাহ নিজের জন্য প্রতিবার ব্যবহার করেছেন সেই নামটিই একটি শ্রেণি নিজেদের খেতাব হিসাবে ব্যবহার করছেন। এই ধৃষ্টতার ব্যাখ্যা হিসাবে তারা শব্দের বুৎপত্তি, আভিধানিক অর্থ, প্রতিশব্দ, হাক্বিক্বি এবং মাজাঝি ইত্যাদি কতিপয় শব্দের জটিল জাল বিস্তার করে বুঝিয়ে দেন যে আল্লাহ যেমন প্রভু বা অভিভাবক তেমনি আলেমরাও ধর্মীয় বিষয়ে মানুষের প্রভু বা অভিভাবক। অর্থাৎ অন্যান্য ক্ষেত্রে তারা যুক্তিহীন যতই হোন, এই ক্ষেত্রে ঘোর যুক্তিবাদী, দলিলের ধার ধারেন না, একে শেরেকিও মনে করেন না। অথচ শ্রদ্ধাবশত মুরব্বিদের কদমবুসি করাকেও তারা অনেকেই শেরকের কাতারে ফেলে দেন।
‘মওলা’ অর্থের আভিধানিক অর্থ অভিভাবক যদি হয় তাহলে কোর’আনের একটি বঙ্গানুবাদেও তো এই আয়াতে ‘আমাদের অভিভাবক’ এমন অনুবাদ করতে দেখা যায় না? সুতরাং বোঝা গেল কৈফিয়ত চাইলেই ব্যাকরণ বই টানাটানি শুরু করা হয়, বলেন আল্লাহর বেলায় হলে এক অর্থ আর মানুষের বেলায় হলে আরেক অর্থ।
এখন যদি কোনো অর্বাচীন প্রশ্ন করে বসে যে, আল্লাহর রসুল যিনি মানবজাতির শিক্ষক তাঁকে কি তাঁর
আসহাবগণ কোনোদিন মওলানা (অভিভাবক/প্রভু) বলে ডেকেছিলেন? না। তাঁকে সবাই ‘রসুলাল্লাহ’ বলেই ডেকেছেন। তাঁর যে আসহাবগণ অর্ধ-পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়ে সত্যের আলোয় মানুষকে উদ্ভাসিত করেছেন, তাঁদেরকে কি মওলানা (অভিভাবক/প্রভু) বলে ডাকা হয়েছে? কোনো সাহাবী কি নামের আগে মওলানা জাতীয় কোনো টাইটেল ব্যবহার করতেন? এর উত্তরে তারাও বলবেন যে, না।
তাহলে বোঝা গেল এই ঘটনা ইসলামে ছিল না, পরে প্রবেশ করেছে। আর যে বিষয়গুলো দীনের মধ্যে পরবর্তীতে প্রবেশ করে সেগুলোকে বেদাত বলে। ইসলামের জ্ঞানীরা তাহলে বেদাতের সাফাই গাইছেন কেন? কারণ এই উপাধিতে তাদের জ্ঞান-গরিমার প্রকাশ ঘটে, তাদের ধর্মব্যবসার সুবিধা হয়।
তবে আমি কোনটি বেদা’ত, কোনটি জায়েজ, কোনটি না-জায়েজ এমন সিদ্ধান্ত দিতে বসি নি। এসব সিদ্ধান্ত দিতে গেলে নাকি দাড়ি থাকতে হয়, টুপি পরতে হয়, ব্রিটিশের মাদ্রাসায় পড়া লাগে। আমি কেবল কিছু অসঙ্গতি মানুষের আদালতে পেশ করব।
কোন কাজের কৈফিয়ৎ থাকে না বা ব্যাখ্যা থাকে না? সবকিছুরই কোনো না কোনো ব্যাখ্যা দাঁড় করানো যায়। সেটা সঠিক ব্যাখ্যাও হতে পারে আবার অপব্যাখ্যাও হতে পারে। কোনো ব্যাখ্যার নেপথ্যে যখন স্বার্থ বা উদ্দেশ্য জড়িয়ে যায় তখন সেই ব্যাখ্যা আর নিরপেক্ষ ও পরম সত্যে পূর্ণ থাকে না, তাতে ভেজাল মিশে যায়। এটাই অপব্যাখ্যা। আল্লাহ বলেছেন, তারা তোমার নিকট এমন কোন সমস্যা উপস্থিত করে না, যার সঠিক সমাধান ও সুন্দর ব্যাখ্যা (আহসানা তাফসিরা) আমি তোমাকে দান করি না (সুরা ফুরক্বান ২৫/৩৩)।
আল্লাহর দেওয়া ব্যাখ্যাই হচ্ছে নিরপেক্ষতা ও ন্যায়ের মানদণ্ড। তাঁর প্রদত্ত ব্যাখ্যা গ্রহণ না করার পেছনে স্বার্থই একমাত্র বাধা। ধর্মব্যবসায়ী আলেম ওলামারা ধর্মকে নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করছেন। তারা চান ধর্ম কেবল তাদের কুক্ষিগত থাকুক। কেউ ধর্মের পথে চলতে গেলে যেন তাদেরকে টোল দিতে হয়। ঠিক যেভাবে একজন ব্যবসায়ী চান তার পুঁজিকে ধরে রাখতে, একজন চাকুরিজীবী চান যেন তার চাকুরিতে কোনো আঁচড়ও না লাগে, তেমনি একজন ধর্মব্যবসায়ী বা ধর্মজীবী চান তার হাত থেকে যেন কেউ এই নিশ্চিত রোজগারের পথটি কেড়ে নিতে না পারে। সেখানে কোনো আঘাত তারা সহ্য করেন না, সেটা নিয়ে প্রশ্ন তুললে বিষম উত্তেজিত, ক্ষুব্ধ ও বিচলিত হয়ে পড়েন।
সাপ তা বিষধর বা নির্বিষ যা-ই হোক, যখন সে ভীত হয় তখন সে ছোবল মারতে উদ্যত হয়। একইভাবে ধর্মের বিনিময় গ্রহণকে হারাম বলা হলে ধর্মব্যবসায়ীরা ফতোয়ার ফনা উদ্যত করে ছোবল মারেন। ধর্মব্যবসায়ীরা এই ‘অপরাধে’ যুগে যুগে বহু নবী-রসুলকে তারা হত্যা করে ফেলেছ। ঈসা (আ.) তাঁর যুগের ইহুদি আলেমদেরকে সাপ ও সাপের বংশধর বলে আখ্যায়িত করেছেন। এরাই তাঁকে ক্রুশে চড়ানোর ব্যবস্থা করেছিল। আর আখেরী নবী বলেছেন, ‘আমার উম্মাহর আলেমরা হবে আসমানের নিচে নিকৃষ্টতম জীব’ (আলী রা. থেকে বায়হাকি, মেশকাত)।
মজার ব্যাপার হচ্ছে এই ইহুদি আলেমরাও তাদের সমাজে ‘রাব্বাই’ বলে অভিহিত হতেন যার অর্থ আমাদের প্রভু। আমাদের আলোচ্য ‘মওলানা’ শব্দের হুবহু প্রতিশব্দ। ধর্মের প্রতিটি বিষয়ের সমাধানের জন্য আজও আমরা তাদের কাছেই দৌঁড়ে যাই।
জীবনের অন্যান্য কোনো বিষয় নিয়েই আমরা তাদের কাছে পরামর্শের জন্য যাই না, পরামর্শ প্রদানের যোগ্যও মনে করি না। সেসব ক্ষেত্রে আমরা নিজেদের সাধারণ জ্ঞানকে ব্যবহার করি। কিন্তু ধর্মীয় প্রসঙ্গে আমরা নিজেদের যাবতীয় বুদ্ধি-জ্ঞান-বিবেক বিসর্জন দিয়ে এই শ্রেণিটির শরণাপন্ন হই। এভাবে তাদেরকে আমরা আমাদের ধর্মজীবনের প্রভু বানিয়ে নিয়েছি। তাদের প্রতি আমাদের এই সমর্পণ যুগের পর যুগ ধরে জারি আছে।
ভগবদ্গীতায় একেই বলা হয়েছে সমর্পণ। সমর্পণ অর্থ নিজে কোনো সিদ্ধান্ত না নিয়ে আমি একজনের প্রতি আমার সিদ্ধান্তের দায়িত্ব সোপর্দ করব আর আমি কেবল তার আনুগত্য করব। শ্রীকৃষ্ণ বলেছেন, এই সমর্পণ হতে হবে কেবল পরমাত্মার প্রতি এবং মানুষের মধ্যে যিনি সঠিক পথে আছেন তার প্রতি। যদি আমার সমর্পণ কোনো দুষ্কৃতকারীর প্রতি অর্পিত হয় তখন সে আমাকে দিয়ে অন্যায় করাবে। এর জন্য দায়ী ভুল ব্যক্তি/সম্প্রদায়ের প্রতি আমার সমর্পণ। আমি আত্মপ্রবঞ্চকের মতো সারাজীবন আত্মার সঙ্গে ধর্ম-অধর্মের সংঘর্ষ করেই যাবো, কিন্তু সত্যের আনন্দ কখনোই লাভ করব না।
এ কথাটিই আল্লাহ পবিত্র কোর’আনে ঈসা (আ.) এর বিকৃত উম্মাহর ক্ষেত্রে বলেছেন এভাবে যে, “তারা তাদের আলেম ও পীর সাহেবদেরকে (রোহবান-সুফিসাধক) তাদের প্রভুরূপে (রব) গ্রহণ করেছে আল্লাহর পরিবর্তে এবং মরিয়মের পুত্রকেও। অথচ তারা আদিষ্ট ছিল একমাত্র মাবুদের এবাদতের জন্য। তিনি ছাড়া কোন হুকুমদাতা (এলাহ) নেই, তারা তাঁর শরীক সাব্যস্ত করে, তার থেকে তিনি পবিত্র।” (সুরা তওবাহ ৩১)।
সুতরাং বোঝা গেল আলেম বা পীর সাহেবদেরকে প্রভু বা মওলা বানিয়ে নেওয়াকে আল্লাহ শেরক বলে আখ্যায়িত করেছেন।
আল্লাহ প্রতিটি মানুষকে ভালো-মন্দ বোঝার জ্ঞান দিয়েছেন। মানুষ যদি সেই জ্ঞানকে ব্যবহার না করে তবে সে আল্লাহর প্রদত্ত নেয়ামতের খেয়ানত বা অমর্যাদা করল। আল্লাহ এজন্য বার বার প্রশ্ন করেছেন, তোমরা কি তোমাদের সাধারণ জ্ঞানকে (আক্কেল) কাজে লাগাবে না? কোর’আনের সুস্পষ্ট নির্দেশ দেখেও নিজের জ্ঞানকে কাজে না লাগিয়ে ধর্মব্যবসায়ীদের মুখের দিকে চেয়ে থাকাই হচ্ছে তাদেরকে প্রভু হিসাবে মেনে নেওয়া। এটাই আল্লাহর ঊর্ধ্বে কাউকে স্থান দেওয়া অর্থাৎ শেরক।
আল্লাহ এও বলে দিয়েছেন যে, অধিকাংশ আলেম ওলামা ও পীর-বুজুর্গরা মানুষকে আল্লাহর পথে চালিত করার পরিবর্তে আল্লাহর পথ থেকেই নিবৃত করে। তিনি বলেন, হে ঈমানদারগণ! আলেম ও পীরদের (রোহবান-সুফিবাদী) অনেকে লোকেদের সম্পদ অন্যায়ভাবে ভোগ করে চলছে এবং আল্লাহর পথ থেকে লোকেদের নিবৃত রাখছে। যারা স্বর্ণ ও রূপা জমা করে রাখে এবং তা ব্যয় করে না আল্লাহর পথে, তাদের কঠোর আযাবের সুসংবাদ শুনিয়ে দিন। (সুরা তাওবা: ৩৪)
এখন ভাবুন, যে ধর্মব্যবসায়ীরা মাওলানা বা রব সেজে বসে আছেন, যাদের কাছে মানুষ মুক্তির পথ তালাশ করেন তারা নিজেরাই জাহান্নামী। তাদেরকে আল্লাহ ঘৃণা করেন।
প্রকৃত আলেম কারা?
মাওলানা আর আলেম কখনো এক কথা নয়। একজন আলেমের কলমের কালি শহীদের রক্তের চেয়েও পবিত্র এ কথাটি হাদিস হিসাবে প্রচলিত আছে। এটি যদি হাদীস না-ও হয় তবু কথা মিথ্যা নয়। যে আলেমের কলমের কালিতে মানুষ ন্যায় প্রতিষ্ঠার জন্য শহীদ হতে অনুপ্রাণিত হয় সেই আলেমের কলমের কালি শহীদের রক্তের চেয়ে অবশ্যই পবিত্র।
এলেম হাসিলের উদ্দেশ্য কী? সংক্ষেপে বলতে গেলে, মানুষ সামাজিক জীব। সমাজবদ্ধ হয়ে চলতে গেলে মানুষের ন্যায়-অন্যায়, ভালো-মন্দ, ক্ষতিকর-উপকারী, প্রয়োজনীয়-অপ্রয়োজনীয়, সত্য-মিথ্যা, অতি-প্রয়োজনীয়-কম প্রয়োজনীয় ইত্যাদির জানার আবশ্যকতা রয়েছে। এটা যে কেবল ধর্মের জ্ঞান তা নয়, সৃষ্টিজগতের যে কোনো বিষয় সম্পর্কে জ্ঞানই এলেম।
যে জ্ঞান দিয়ে সত্য-মিথ্যা, ন্যায়-অন্যায়, বৈধ-অবৈধ ইত্যাদি নিরূপিত হয় না, সেই জ্ঞান বিষাক্ত। এই জ্ঞান দিয়ে যার মগজ পূর্ণ সে জ্ঞানী নয়, সে জাহেল। এই জগতে বহু ইতর প্রাণীরও বহু জ্ঞান রয়েছে। একটি কুকুর গন্ধ শুঁকে কোটি মানুষের মধ্যেও একজন নির্দিষ্ট ব্যক্তিকে বের করতে পারে। পৃথিবীর সবচেয়ে চৌকস গোয়েন্দা বা প্রযুক্তিও এই কাজ করতে পারবে না। এই জ্ঞান আল্লাহ তাকে দিয়েছেন। কাজেই মানুষের মধ্যে সেই জ্ঞানীকেই প্রকৃত আলেম বা জ্ঞানী বলা যাবে যাবে। যারা জ্ঞানের দ্বারা মানবতার কোনো কল্যাণই সাধিত হলো না, কেবল যিনি নিজের জ্ঞানকে বিক্রি করে কিছু অর্থনৈতিক ফায়দা হাসিল করে বংশবিস্তার করে পরপারে চলে গেলেন তার জ্ঞানের কোনো মূল্য নেই। তার ঐ জ্ঞান মানুষের সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠায় কোনো কাজে আসে নি। এমন জ্ঞান ও জ্ঞানীর সমাজে থাকা না থাকায় কী আসে যায়?
আল্লাহর রসুল আলেমদেরকে নায়েবে নবী বলে আখ্যা দিয়েছেন। সেই আলেম হচ্ছেন প্রকৃত আলেম যারা নবীর আদর্শের অনুসরণ করে থাকেন। যে নবী (দ.) তাঁরা সারাটা জীবন মানবতার কল্যাণের জন্য নিজের সবকিছু উৎসর্গ করে সংগ্রাম করে গেছেন, যার সাহাবীরাও একই পথে জীবনপাত করে গেছেন, সেই নবীর ওয়ারিশ আর নায়েব দাবি করে কীভাবে একটি শ্রেণি আরাম আয়েশে ধর্মব্যবসা করে সমাজের যাবতীয় অন্যায়কে মুখ বুজে মেনে নিয়ে জীবন কাটিয়ে যাচ্ছেন ভাবতে অবাকই লাগে। আল্লাহর রসুল যাঁকে জ্ঞান নগরীর দ্বার বলেছেন, সেই আলী (রা.), তিনি কুলির কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করতেন এই কথা বলতে গিয়ে ওয়াজকারীরা চোখের পানি ছেড়ে দেন। কিন্তু তারা ধর্মকেই তাদের পেশা বানিয়ে নিয়েছেন যা সকল ধর্মে নিষিদ্ধ।

লেখাটি শেয়ার করুন আপনার প্রিয়জনের সাথে

Email
Facebook
Twitter
Skype
WhatsApp
জনপ্রিয় পোস্টসমূহ