[রুফায়দাহ পন্নী, ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক, দৈনিক দেশেরপত্র]
‘এই উপমহাদেশের রাজনীতিতে ধর্মই এখন এক নাম্বার ইস্যু। ধর্মনিরপেক্ষতা বর্তমানে শুধুমাত্র একটি শ্লোগান। আপামর জনতার মধ্যে এই শ্লোগানের ভিত্তি নেই। এই উপমহাদেশের মানুষ হাজার বছর ধরে ধর্ম দ্বারা পরিচালিত হয়ে আসছে। এদের রন্ধ্রে রন্ধ্রে, শিরা-উপশিরায় ধর্ম মিশে আছে।’ গতকাল রাজধানীর পাবলিক লাইব্রেরিতে “ধর্মব্যবসায়ীদের অপপ্রচার নারী মুক্তির অন্তরায়” শীর্ষক সেমিনারে দৈনিক দেশেরপত্রের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক রুফায়দাহ পন্নী এ কথা বলেন। তিনি বলেন- ‘এই উপমহাদেশের মানুষ ধর্মপ্রাণ বিধায় তারা ধর্ম দ্বারা সহজেই প্রভাবিত হয়। ব্রিটিশদের বয়ে আনা ধর্মনিরপেক্ষতা ও তথাকথিক গণতন্ত্র এতদঞ্চলের মানুষের সহজাত চরিত্রের সাথে সামঞ্জস্যশীল নয়। এর প্রমাণ আমরা পেলাম ভারতের সদ্য অনুষ্ঠিত লোকসভা নির্বাচনে। শত বছরের পুরনো ধর্মনিরপেক্ষতাবাদী দল কংগ্রেসকে প্রত্যাখ্যান করে মানুষ বেছে নিল ধর্মাশ্রয়ী দলকে। এই একই ঘটনা যে আমাদের দেশেও ঘটবে না তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। কাজেই সরকারের জন্য এটি একটি অশনিসংকেত। ধর্মনিরপেক্ষতা দ্বারা এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করা সম্ভব নয়। ধর্মব্যবসায়ীদের উত্থানকে রোধ করার একমাত্র উপায় হলো- তারা যে ধর্মব্যবসায়ী, ধর্ম নিয়ে অপরাজনীতি করে খায় তা মানুষের সামনে প্রমাণ করে দেওয়া। এটা করতে না পারলে জাতি আবশ্যম্ভাবী সঙ্কটে পতিত হবে। আর এটা একমাত্র আমরাই প্রমাণ করতে পারবো এনশা’আল্লাহ। ধর্মব্যবসায়ীদেরকে ভ্রান্ত প্রমাণ করার জন্য যে তথ্য-উপাত্ত, যুক্তি-প্রমাণ দরকার তা আল্লাহ টাঙ্গাইলের ঐতিহ্যবাহী পন্নী পরিবারের সন্তান এমামুযযামান জনাব মোহাম্মদ বায়াজীদ খান পন্নীকে দান করেছেন। আমরা প্রমাণ করে দেবো যে, বর্তমানে ধর্মব্যবসায়ীরা যে ইসলামকে নিয়ে ব্যবসা করে খাচ্ছে, রাজনীতি করছে সেটা প্রকৃত ইসলাম নয়। কিন্তু সেটা জনগণের কাছে পৌঁছে দিতে হবে সরকারকে। সরকারের নিজ স্বার্থেই এটা করা প্রয়োজন। আওয়ামী লীগ সরকারের সাথে কংগ্রেস সরকারের পার্থক্য হলো- কংগ্রেসের সামনে মৌলবাদীদের ধর্ম দিয়ে মোকাবিলা করার মতো উপাদান ছিল না। কিন্তু বাংলাদেশ সরকারের সামনে সেটা আছে, যা আমরা উপস্থাপন করছি। যদি সরকার সেটার গুরুত্ব দেয়।’
তিনি সরকারের উদ্দেশ্যে বলেন- ধর্ম নিয়ে রাজনীতির মোকাবেলায় ধর্মের বিরোধিতা করে সফল হতে পারবেন না। বরং এটা দ্বারা আপনাদেরকে ধর্মব্যবসায়ীরা আরও নাস্তিক প্রমাণ করে দিবে। কারণ তাদের ভিত্তি সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে প্রোথিত। জোর করে তাদের মন থেকে ধর্মের বিশ্বাস দূর করতে পারবেন না এবং সেই চেষ্টা করা হবে ভুল। আপনারা মনে করছেন রাষ্ট্র ক্ষমতা আছে তাই কোনো ভয় নেই? ভুল ধারণা। ৫ই মে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী অপারেশন চালিয়ে তাদের রাস্তা থেকে উচ্ছেদ করে দিল। তারা কোথায় গেছে? তারা আসমানে চলে যায় নি, বা মাটির নিচেও যায় নি। তারা গ্রামে গ্রামে মানুষের সঙ্গে মিশে গেছে। মিশে যেয়ে গ্রামের নারীদেরকে, সরলপ্রাণ মুসলমানদেরকে বুঝিয়েছে যে এই সরকার নাস্তিক। আমাদের শেষ করে দিয়েছে, ইসলাম শেষ করে দিয়েছে, আলেমদেরকে ধ্বংস করে দিচ্ছে। ফল হয়েছে এই যে, এখন যতই শক্তি প্রয়োগ করবেন ততই আপনারা ইসলামবিদ্বেষী হিসেবে প্রতীয়মান হবেন। কাজেই ধর্মের বিরোধিতা করেও নয়, শক্তি প্রয়োগ করেও নয়, ধর্মের মধ্যে থেকে সত্যের উপর দাঁড়িয়েই ধর্মব্যবসায়ীদেরকে ভ্রান্ত প্রমাণ করতে হবে। এ জন্য দরকার প্রকৃত ইসলাম, যা আমাদের কাছে আছে।
দৈনিক দেশেরপত্র সম্পর্কে রুফায়দাহ পন্নী বলেন, ‘আমাদের পত্রিকার মূল শ্লোগান আপনারা দেখতে পাচ্ছেন- মানবতার কল্যাণে সত্যের প্রকাশ। যেটা সত্য সেটা আমরা প্রকাশ করি। দৈনিক দেশেরপত্র আমাদের একটা মুখপত্র পত্রিকা। আমার বাবা এমামুযযামান জনাব মোহাম্মদ বায়াজীদ খান পন্নী টাঙ্গাইলের করটিয়ার ঐতিহ্যবাহী পন্নী পরিবারের সন্তান। তাঁর আদর্শে আমরা অনুপ্রাণিত। দৈনিক দেশেরপত্রের মাধ্যমে আমরা তাঁর মহান আদর্শকে মানুষের দ্বারে দ্বারে পৌঁছে দিচ্ছি।’
পরিশেষে উপস্থিত গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, ‘বাস্তবতার আলোকে এই সরকারের সামনে যে সঙ্কটগুলো আসছে তা আমি তুলে ধরলাম। এর যৌক্তিক সমাধানও প্রস্তাব করলাম। এখন বাকিটা তাদের সিদ্ধান্তের বিষয়। এই সিদ্ধান্তের উপরই তাদের ভবিষ্যৎ নির্ধারিত হবে যে, তারা আশু বিপর্যয় কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হবে নাকি অশেষ ভোগান্তির শিকার হবে। তাদের সিদ্ধান্তের উপর আমার আর কোনো জোর নেই। কিন্তু আপনারা যারা এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত আছেন, তাদেরও যথেষ্ট দায়িত্ব রয়েছে। মনে রাখবেন, ধর্মব্যবসায়ীরা যে ইসলামকে ভর করে চলছে তা আল্লাহ-রসুলের প্রকৃত ইসলাম নয়। এটা বিকৃত ইসলাম। এই ইসলাম মানুষকে না পৃথিবীতে শান্তি দিতে পারবে, না পরকালীন মুক্তি এনে দিতে পারবে। তাই আপনাদের প্রতি নিবেদন, আপনারা ধর্মব্যবসায়ীদের পেছনে ছুটবেন না। তাদের পেছনে নামাজ, রোজা, হজ্ব, যাকাতসহ যতই এবাদত করেন তার কোনো সুফল আপনারা পাবেন না। বরং সেটা হবে আল্লাহর হুকুম অমান্য করা। যদি সত্যই আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করতে চান, তাহলে আমাদের আহ্বানে প্রকৃত ইসলামের ছায়াতলে ঐক্যবদ্ধ হোন।’ অডিটোরিয়ামে উপস্থিত দর্শকবৃন্দ মুহূর্মুহু করতালির মাধ্যমে তার বক্তব্যকে স্বাগত জানান।