হেযবুত তওহীদ

মানবতার কল্যাণে নিবেদিত

লা’নতের প্রকারভেদ এবং মুসলিম জনসংখ্যা

মোহাম্মদ আসাদ আলী

সর্বশক্তিমান আল্লাহ কোর’আনে বিভিন্ন জাতি, গোষ্ঠী, গোত্র, এমন কি ব্যক্তিকে তার কৃতকর্মের জন্য লা’নত অর্থাৎ অভিশাপ দিয়েছেন। তাঁর অভিশাপ মানেই নির্মম শাস্তি। আল্লাহ, যার চেয়ে বড় ক্ষমাশীল নেই, যার চেয়ে বড় দয়াশীল নেই, যার কাছে ক্ষমা চাইলে তিনি বার বার ক্ষমার আশ্বাস দিয়েছেন, সেই তিনিই যখন অভিশাপ দেন তখন নিশ্চিতভাবে বলা যায় যে, সেই ব্যক্তি বা গোত্র বা গোষ্ঠী বা জাতি ক্ষমার যোগ্যতা ছাড়িয়ে বহুদূরে চলে গেছে, সেই গফুরুর রহীমেরও ক্ষমার সীমানা ছাড়িয়ে গেছে। কোর’আনে দেখা যায় তিনি বিভিন্নভাবে, প্রধানতঃ তিনভাবে লা’নত দিয়েছেন। আর তা হচ্ছে-
১। তিনি শুধু নিজে দিয়েছেন।
২। অন্যের মুখ দিয়ে দিয়েছেন।
৩। তিনি তাঁর মালায়েক অর্থাৎ ফেরেশতা ও মানবজাতি সম্মিলিতভাবে লা’নত দিয়েছেন।
উদাহরণ: ১ম ক্ষেত্রের লা’নত হচ্ছে শুধু তাঁর একার লা’নত তিনি দিচ্ছেন তাদের, যুদ্ধ করতে বললে যারা ভয়ে মুর্ছিত, মৃতপ্রায় হয়ে যায় (মোহাম্মদ-২৩, ২৪), কাফেরদের (আহযাব-৬৪), মুনাফিকদের (আহযাব-৬০, ৬১), জালেমদের (অন্যায়কারীদের) (হুদ-১৮) ইত্যাদি।
২য় ক্ষেত্রের লা’নত হচ্ছে অন্যের মুখ দিয়ে লা’নত তিনি দিচ্ছেন বনি ইসরাইলের কাফেরদের একবার দাউদ (আ:) কে দিয়ে আরেকবার ঈসা (আ:) কে দিয়ে (মায়েদা-৮১) ।
আর ৩য় ক্ষেত্রের লা’নত হচ্ছে তিনি, তাঁর মালায়েক ও মানব জাতির সম্মিলিত লা’নত দিচ্ছেন দু’বার। একবার দিচ্ছেন সেই সব কাফেরদের যারা মৃত্যু পর্যন্ত আল্লাহর দীনকে অস্বীকার কোরে কাফের অবস্থাই মারা গেল। তাদের সম্বন্ধে আল্লাহ বলছেন- তারা (জাহান্নামে) চিরদিন থাকবে। তাদের শাস্তি কমানোও হবেনা, বিরতিও দেয়া হবে না (বাকারা-১৬১, ১৬২)। আরেকবার দিচ্ছেন তাদের, যারা একবার সত্য গ্রহণ করার পর কুফরে (অবিশ্বাসে) ফিরে গেছে (মায়েদা-৮৬, ৮৯) ।
আল্লাহর একার দেয়া লা’নত, অন্যের মুখ দিয়ে দেয়া লা’নত আর আল্লাহ, তাঁর মালায়েক ও মানব জাতির সম্মিলিত লা’নত; এই তিন রকমের লা’নতের মধ্যে সবচেয়ে ভয়ংকর লা’নত হচ্ছে ঐ সম্মিলিত লা’নত সন্দেহ নেই। অন্যের মুখ দিয়ে তিনি যে দু’বার বনি ইসরাইল অর্থাৎ ইহুদি জাতিকে লা’নত দিলেন তার পরিণাম দেখলেই বোঝা যাবে যে সম্মিলিত লা’নত কত ভয়ংকর হবে।
ইহুদি জাতির উপর প্রথম লা’নত তিনি দিলেন দাউদের (আ:) মুখ দিয়ে। ফল হলো এই যে, ব্যাবিলোনের রাজা (নবুশ্যাড্নেয়ার) ইহুদিদের আক্রমণ কোরে পরাজিত করলো। ব্যাবিলোনীয় সৈন্যরা তাদের ঘরে ঘরে প্রবেশ কোরে তাদের হত্যা করলো, বাকি সমস্ত লোকজনকে বন্দি কোরে সমস্ত জাতিটাকে ক্রীতদাসে পরিণত কোরে তাদের স্বদেশ ব্যাবিলোনে নিয়ে গেল, ইহুদিদের ডেভিড মন্দির (Temple of David) ধ্বংস কোরে দিল। এ শাস্তি আল্লাহ দিলেন খ্রিস্টপূর্ব ৫৮৬ সনে। তারপর যখন তারা আবার বিপথগামী হলো তখন আল্লাহ তাঁর নবী ঈসা (আ:) এর মুখ দিয়ে তাদের দ্বিতীয় বার লা’নত দিলেন। এই দ্বিতীয় লা’নতের ফলে সেই ৭০ খ্রিস্টাব্দ থেকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পর্যন্ত অর্থাৎ প্রায় দুই হাজার বছর এই ইহুদি জাতি ইউরোপের যে দেশেই তারা আশ্রয় নিয়েছে, বসতি স্থাপন করেছে, সেই দেশের সমস্ত মানুষ তাদের অবজ্ঞা করেছে, ঘৃণা করেছে। আমরা শুকর যেমন ঘৃণা করি তেমনি ঘৃণা করেছে। শুধু ঘৃণা কোরেই তারা ক্ষান্ত হয় নি। মাঝে মাঝেই ইউরোপের খ্রিস্টানরা দলবদ্ধ হয়ে ইহুদিদের বসতি আক্রমণ কোরে তাদের পুরুষদের হত্যা কোরে মেয়েদের বেঁধে নিয়ে গেছে, সম্পত্তি লুটপাট কোরে বাড়ি-ঘর আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দিয়েছে। এই কাজটা ইউরোপীয় খ্রিস্টানরা প্রতিটি ইউরোপিয়ান রাষ্ট্রে এতবার করেছে যে ইউরোপীয় ভাষায় একে বোঝাবার জন্য একটি নতুন শব্দেরই সৃষ্টি হয়েছে। সেটা Pogrom, যার আভিধানিক অর্থ হলো Organised Killing and Plunder of a Community of People, বাংলায় “সুসংগঠিত ভাবে সম্প্রদায় বিশেষকে হত্যা ও লুণ্ঠন।” দু’হাজার বছর ধরে অভিশপ্ত ইহুদিদের উপর ঐ Pogrom চালাবার পর শেষ Pogrom আল্লাহ করালেন হিটলারকে দিয়ে। তাকে দিয়ে তিনি ইউরোপের ইহুদিদের উপর চরম অত্যাচার করালেন ও তাদের ছয় মিলিয়ন অর্থাৎ ৬০ লক্ষ ইহুদিদের হত্যা করালেন। এ হিসাবটা অবশ্য ইহুদিদের করা সুতরাং বাড়াবাড়ী হতে পারে, কিন্তু হিটলারের হাতে যে লক্ষ লক্ষ ইহুদি মারা গেছে তা ঐতিহাসিক সত্য। মনে হয় এখন আল্লাহ তাদের উপর থেকে লা’নত উঠিয়ে নিয়েছেন। কারণ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে তাদের উপর আর Pogrom হচ্ছে না এবং তারা বর্তমানে একটি শক্তিশালী ও সম্মানিত জাতি।
এখন মুসলিম বলে পরিচিত জাতিটির দিকে দৃষ্টি দেয়া যাক। অস্বীকার করার কোন উপায় নেই যে আল্লাহ লা’নত দিলে কোন জাতির যে দশা হয়, এই জাতির দশা ঠিক তাই। মুসলিম বলে পরিচিত এই জাতি সমস্ত পৃথিবীময় তেমনি ঘৃণিত, লাঞ্ছিত, অত্যাচারিত, অপমানিত হচ্ছে। এই জাতি পৃথিবীর যেখানেই আছে সেই দেশের মানুষ দিয়ে অত্যাচারিত, অপমানিত, লাঞ্ছিত হচ্ছে। খ্রিস্টানদের হাতের কাছে যেখানে মুসলিম আছে সেখানে খ্রিস্টানদের দিয়ে, (বসনিয়া-হারজেগোভিনা, সুদান, ফিলিপাইন, ইথিওপিয়া) ইহুদিদের দিয়ে (পশ্চিম এশিয়া প্যালেস্টাইন), বৌদ্ধদের দিয়ে (চীন, মায়ানমার, থাইল্যাণ্ড, কমপুচিয়া ভিয়েতনাম) হিন্দুদের দিয়ে (সমস্ত ভারত ও কাশ্মীর)। অর্থাৎ পাঁচটি প্রধান ধর্মের চারটিকে দিয়েই পৃথিবীর সর্বত্র মুসলিম নামের এই জাতিটাকে পেষা হচ্ছে। আর সে পেষা কেমন পেষা? তাদের গুলি কোরে, ধারাল অস্ত্র দিয়ে, ট্যাংক দিয়ে পিষে হত্যা করা হচ্ছে, তাদের বাড়ি-ঘর জ্বালিয়ে দেয়া, তাদের মেয়েদের ধরে নিয়ে যেয়ে ধর্ষণ করা হচ্ছে ধর্ষণের পর হত্যা করা হচ্ছে, ইউরোপের ও অন্যান্য স্থানের বেশ্যালয়ে বিক্রি করা হচ্ছে। বসনিয়ায় খ্রিস্টান সার্বরা যা করেছে তার নজির মানুষের ইতিহাসে নেই। খ্রিস্টান সার্বরা ৭০ হাজার মুসলিম নারীকে ধর্ষণ কোরে গর্ভবতী করেছে, তাদের সাত মাস পর্যন্ত আটকে রেখেছে যাতে তারা খ্রিস্টানদের ঔরসজাত সন্তানগুলি গর্ভপাত কোরে ফেলে দিতে না পারে। আর এ শতাব্দীর শুরুতে গত ১০ বছরে বহুজাতিক বাহিনী এক ইরাকেই হত্যা করেছে প্রায় ১০ লক্ষাধিক নারী-পুরুষ ও শিশুকে। অন্যদিকে আরাকানে বৌদ্ধরা হাজার হাজার মুসলিম রোহিঙ্গাদের তাদের বাস্তুচ্যুত করছে এবং অগণিত নারী-পুরুষদের নৌকা কোরে অজানা পথে পাড়ি দিতে বাধ্য করেছে। এ যদি আল্লাহর লা’নতের ফল না হয় তবে লা’নত কাকে বলে?

লেখাটি শেয়ার করুন আপনার প্রিয়জনের সাথে

Email
Facebook
Twitter
Skype
WhatsApp
সার্চ করুন

যুক্ত হোন আমাদের ফেসবুক পেজের সাথে...