হেযবুত তওহীদ

মানবতার কল্যাণে নিবেদিত

সৃষ্টির কল্যাণই ধর্ম

রাকীব আল হাসান:
——————
প্রাণীগণের অভ্যুদয়, ক্লেশনিবারণ ও পরিত্রাণের নিমিত্তই ধর্ম্মের সৃষ্টি হইয়াছে; অতএব যাহা দ্বারা প্রজাগণ অভ্যুদয়শালী, ক্লেশবিহীন ও পরিত্রাণ প্রাপ্ত হয়, তাহাই যথার্থ ধর্ম্ম। (কালি প্রসন্ন সিংহ অনুদিত মহাভারত ২য় খণ্ড: শান্তিপর্ব, নবাধিকশততম অধ্যায়- পৃষ্ঠা: ৬৪৪)।
মহাভারতের এই সত্যবাণী থেকে বোঝা যায় যে, ধর্মের মূল উদ্দেশ্যই হলো মানুষের কল্যাণ, সৃষ্টির কল্যাণ, জগতের কল্যাণ। যা দ্বারা মানুষের কল্যাণ হয়, সমাজের কল্যাণ হয়, সৃষ্টির কল্যাণ হয় তা-ই ধর্ম আর অকল্যাণকর সবই অধর্ম। সত্য প্রতিষ্ঠিত হলে শুধু মানুষ নয় প্রতিটি প্রাণী, প্রতিটি উদ্ভিদ নিরাপদ থাকবে। কারণ ছাড়া একটি গাছের পাতাও কেউ ছিড়বে না।
আরেকটু বিস্তারিতভাবে বললে ধর্ম ও ধারণ একই শব্দ থেকে এসেছে। যে গুণ বা বৈশিষ্ট ধারণ করে কোনো বস্তু তার স্বকীয়তা, নিজস্বতা পায় তাকেই ঐ বস্তুর ধর্ম বলে। যেমন একটি লৌহদণ্ড আকর্ষণ করার গুণ ধারণ করে চুম্বকে পরিণত হয়। এই আকর্ষণ করার গুণটিই হলো ঐ চুম্বকের ধর্ম। যদি কোনো কারণে চুম্বক তার ধর্ম তথা আকর্ষণ করার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে তবে সেটি পুনরায় লৌহে পরিণত হয়, সেটি আর চুম্বক থাকে না। শ্রেষ্ঠতম সভ্যতার লীলাত্রে ভারতবর্ষের তিন কোটি মানুষ ব্রিটিশ শাসনের শেষার্ধে না খেয়ে মারা গেছে। কিন্তু সেই শোষণ নিপীড়নের কথা আমরা জাতিগতভাবে অবলীলায় বিস্মৃত হয়েছি। আজকের উত্তর আমেরিকা বা অস্ট্রেলিয়া সেই ইউরোপেরই সম্প্রসারিত অংশ যদিও এক সময় সেগুলোও ব্রিটিশ কলোনি ছিল। সেখানকার আদিবাসীদেরকে কীভাবে নির্মূল করা হয়েছিল তা পাঠ করলে কঠোরহৃদয় মানুষও অশ্র“সংবরণ করতে পারবেন না। উপনিবেশ যুগের সীমাহীন শোষণের ফলে পাশ্চাত্য জগৎ হয়ে গেল উন্নত ধনী বিশ্ব, আর এশিয়া, আফ্রিকার দেশগুলো হয়ে গেলো অনুন্নত, পশ্চাৎপদ তৃতীয় বিশ্ব। গত একশ বছরে তারা কেবল ভাগ্যোন্নয়ন, ক্ষুণিœবৃত্তির নিবারণ, দারিদ্র্য দূরীকরণ ও ভৌগোলিক স্বাধীনতার জন্য প্রাণপণ লড়াই করেছে, কিন্তু পেরে উঠছে না। কারণ পশ্চিমাদের শোষণ এখনো চলছে, তবে ভিন্নরূপে। ঋণের বোঝা দিন দিন বাড়ছে। ওদিকে এই একশ বছরে ইউরোপ জ্ঞান বিজ্ঞান-প্রযুক্তিতে এত বেশি অগ্রগতি অর্জন করেছে যে বাকি দুনিয়ার পক্ষে তাদের উপর নির্ভরশীল ও অনুগামী হওয়া ছাড়া আর কোনো গতি নেই। তারাই আজ এই পশ্চাৎপদ দেশগুলোর মানুষকে বাথরুম সেরে হাত ধোয়ার উপকারিতা শেখায়।
তিনি বলেন, এই অবস্থা থেকে আবারও এই মুসলিম নামক জাতিকে শ্রেষ্ঠত্বের আসনে ফিরে যেতে হলে জঙ্গিবাদের দ্বারা ইসলামের উপর যে কলঙ্কটিকা পশ্চিমা ষড়যন্ত্রকারীরা লেপন করে দিয়েছে তাকে মুছে ফেলে প্রকৃত ইসলামের বিকাশ ঘটাতে হবে। অন্যথায় জঙ্গিবাদ নামক মতবাদের দানব আমাদের দেশটিকেও গ্রাস করে নেবে। জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে গণসচেতনতা সৃষ্টির কথা সবাই বলেন কিন্তু কারা সেটা করবে? একজন পেশাদার রাজনীতিবিদ যখন তার বক্তৃতায় মানুষকে দেশমাতৃকার জন্য ত্যাগস্বীকার করার আহ্বান করেন তাতে মানুষ কতটা অনুপ্রাণিত হয়? অনেকে বলেন, জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে আলেম সাহেবদের জুম্মার খোতবায় বয়ান করা উচিত, তাদের বিরাট দায় রয়েছে। কিন্তু ধর্মজীবী আলেমসমাজ জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে জনসচেতনতা সৃষ্টি করতে চাইলে তা কখনোই গ্রহণযোগ্যতা পাবে না। কারণ জঙ্গিবাদীরা ঈমানী চেতনা দ্বারা আÍোৎসর্গীকৃত পাক্ষান্তরে ধর্মজীবী দরবারী আলেমরা টাকার বিনিময়ে ওয়াজ করেন। তাদের ওয়াজের কোনো তাসির (প্রভাব) মানুষের উপর পড়ে না, জনতা কেবল ওয়াজ শোনার সওয়াবটারই প্রত্যাশী, যদিও এতে কোনো ফায়দা হয় না। দুর্নীতিবাজ পুলিশ যদি ঘুষের বিরুদ্ধে উপদেশ দেয় তার ফল যতটুকু হবে, লেবাসধারী ধর্মব্যবসায়ীরা বা ধর্ম থেকে পার্থিব স্বার্থ হাসিলকারীরা জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে ওয়াজ করলে ততটাই ফলপ্রদ হবে।
তিনি আরও বলেন, জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে আদর্শিক লড়াইয়ের কাজটি করতে পারে হেযবুত তওহীদ। কারণ হেযবুত তওহীদকে জঙ্গিবাদের অসারতা প্রমাণ করার জন্য প্রয়োজনীয় সকল ধর্মীয় যুক্তিনির্ভর প্রমাণ আল্লাহ দান করেছেন এবং আমরা সম্পূর্ণ নিঃস্বার্থভাবে মানবতার কল্যাণার্থে তা মানুষের সামনে তুলে ধরছি। তথাপি স্রেফ সন্দেহ করে আমাদের বিরুদ্ধে এদেশের মিডিয়াগুলো অনেক অপপ্রচার করেছে। ফলে আমরা বিরাট হয়রানির শিকার হয়েছি। পাঁচ শতাধিক সন্দেহমূলক মামলা করা হয়েছে। কিন্ত আজ পর্যন্ত একটি মামলাতেও তদন্ত করে একটি অপরাধ বা আইনভঙ্গ করার প্রমাণ কেউ দেখাতে পারে নি। এর কারণ আমাদের আন্দোলনের একটি নীতি হচ্ছে, আমরা দেশের আইন কোনো অবস্থাতেই ভঙ্গ করব না। আমরা এদেশে আইন মান্য করার ক্ষেত্রে একটি রেকর্ড স্থাপন করেছি যা কোনো রাজনীতিক দল দূরের কথা আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীও দাবি করতে পারবে না। তাদের হাজার হাজার সদস্য সাজা পায় কিন্তু আমাদের প্রতিটি সদস্য আদালতে নির্দোষ প্রমাণিত হয়েছেন। যার ফলে বর্তমানের এই চরম সঙ্কটপূর্ণ সময়ে হেযবুত তওহীদ বাংলাদেশের মানুষের কাছে একটি প্রিয় নামে পরিণত হচ্ছে। আমরা বিশ্বাস করি, এই সত্য একদিন সমগ্র পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়বে এবং বিশ্বমানবতাকে মুক্তির পথ প্রদর্শন করবে।

লেখাটি শেয়ার করুন আপনার প্রিয়জনের সাথে

Email
Facebook
Twitter
Skype
WhatsApp
সার্চ করুন

যুক্ত হোন আমাদের ফেসবুক পেজের সাথে...