হেযবুত তওহীদ

মানবতার কল্যাণে নিবেদিত

সমাজ পরিবর্তনের প্রথম পদক্ষেপ ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’

মো. মোস্তাফিজুর রহমান শিহাব:

ধরুন আপনি একটি প্রত্যন্ত অঞ্চলে বেড়াতে গিয়েছেন। গিয়ে দেখলেন সেখানের লোকদের পর্যাপ্ত পানি সরবরাহ ও পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থাপনা নেই। আপনি এ বিষয়ে তাদেরকে সহযোগিতা করতে চাইলেন এবং বললেন যে, এর জন্য যে কর্মপরিকল্পনা দরকার তা আপনার কাছে রয়েছে। তারা যদি আপনার কথা মোতাবেক কাজ করে তবেই সেটা বাস্তবায়ন সম্ভব। খেয়াল করুন, পরিবর্তনের জন্য সবচেয়ে প্রথমে আবশ্যক কাজ হচ্ছে আপনার নির্দেশ, হুকুম সকলের মেনে নেয়া। সবাই আপনার হুকুম অনুযায়ী কাজ করলেই তবে সমাজের উন্নয়ন হবে, সবার দুঃখ লাঘব হবে।

এখন চিন্তা করুন যদি সবাই আপনার হুকুম মানবে এ শর্ত মেনে নেয় তবেই কিন্তু আপনি তাদের জীবনব্যবস্থায় উন্নতি আনতে পারবেন আর যদি তারা আপনার কথা শুনবে এ শর্ত মেনে না নেয় তবে আপনার পরিকল্পনা তাদের কোন উপকারে আসবে না আর আপনি আপনার পরিকল্পনা তাদের দিবেনও না কারণ তারা তা বাস্তবায়নের প্রতিশ্রুতি দেয় নি। তারা আপনার অনেক প্রশংসা করলেও আপনি তাদের উপর সন্তুষ্ট হবেন না কারণ আপনার কাম্যই ছিল তাদের সমাজের উন্নয়ন সাধন।

মহান আল্লাহ এ পৃথিবী সৃষ্টি করলেন ও পরবর্তীতে এ পৃথিবীতে মানুষকে প্রেরণ করলেন। এই মানুষ দুনিয়ায় এসে পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্র গঠন করল। মানুষ যাতে এ পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রে শান্তিতে বসবাস করতে পারে সে জন্য আল্লাহ যুগে যুগে নবী-রসুলদের প্রেরণ করেছেন। আল্লাহ মানুষকে সৃষ্টি করেছেন তাই মানুষ কিভাবে জীবনযাপন করলে শান্তিতে থাকতে পারবে তা আল্লাহর চেয়ে ভালো আর কেউ বলতে পারবে না। এরই প্রেক্ষিতে আল্লাহ নবী-রাসুলদের সর্বপ্রথম দায়িত্ব দিয়েছেন মানুষকে তওহীদের উপর ঐক্যবদ্ধ করতে অর্থাৎ লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ, আল্লাহর হুকুম ছাড়া আর কারো হুকুম মানি না। আল্লাহ সর্বপ্রথম মানবজাতির কাছ থেকে একটি কথাই মেনে নেয়ার অঙ্গীকার চেয়েছেন যে তাঁর হুকুম ছাড়া আর কারো হুকুম মানা যাবে না। মানুষ যদি এই কথার উপর ঐক্যবদ্ধ হয় তবেই আল্লাহ তার পরিকল্পনা দিবেন ও সেই অনুযায়ী চললে মানুষের জীবনে, সমাজে ও রাষ্ট্রে শান্তি নেমে আসবে।

আমরা যদি পূর্ববর্তী নবী-রসুলদের জীবনীর দিকে দৃষ্টিপাত করি তবে দেখবো তাঁরা সবাই সর্বপ্রথম মানুষদের কলেমা অর্থাৎ লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ- এর উপর ঐক্যবদ্ধ করেছেন। তাঁরা সর্বপ্রথম তাদেরকে ঐক্যবদ্ধ করার পর আল্লাহ পরবর্তী ওহী নাযিল করেছেন ও সে অনুযায়ী তাঁরা জাতিকে পরিচালনা করেছেন। আল্লাহর শেষ রসুল আমদের প্রিয় নবীও মক্কার ১৩ বছর মানুষকে শুধু কলেমার ডাক দিয়েছেন। তাদেরকে আল্লাহর এক হুকুমদাতা হিসেবে মেনে নিতে বলেছেন। পরবর্তীতে যখন তারা আল্লাহকে হুকুমদাতা হিসেবে মেনে নিয়েছে তখন আল্লাহর অল্প অল্প করে তাঁর ওহি সম্বলিত পবিত্র কোর’আন নাযিল করছেন। আল্লাহর হুকুম সমাজে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার ফলে অর্ধ দুনিয়ায় যে শান্তি প্রতিষ্ঠা হয়েছিল তার সাক্ষী ইতিহাস।

বর্তমানে আমরা যে পরিস্থিতি রয়েছি সেখান থেকে আমাদের উদ্ধার পাওয়ার একমাত্র উপায় হলো কলেমার ভিত্তিতে ঐক্যবদ্ধতা। সমাজ আজ ধ্বংসের পথে। আমাদের রাজনৈতিক ব্যবস্থা, অর্থনৈতিক ব্যবস্থা, সামাজিক ব্যবস্থা সকল কিছু আমরা গঠন করেছি পাশ্চাত্যের অনুকরণে ব্রিটিশদের রেখে যাওয়া সিস্টেমের উপর। এর ফলে আমাদের সমাজ হয়ে পরেছে ভারসাম্যহীন। আমরা যদি আবার এ সমাজের উন্নয়ন চাই তাহলে এখনই আমাদের সর্বপ্রথম আল্লাহকে হুকুমদাতা হিসেবে মেনে নিতে হবে। আমরা যারা নিজেদের মুসলিম বলে দাবি করছি তাদের উচিত বিষয়টি নিয়ে চিন্তা করা। আমরা বহুপূর্বেই আল্লাহকে হুকুমদাতা হিসেবে বাদ দিয়ে পাশ্চাত্যের সৃষ্টি তথা মানুষের সৃষ্টি আইন-কানুন দিয়ে আমাদের জীবন পরিচালনা করছি। এর ফলে আমরা কার্যত ভাবে কাফের মোশরেকে পরিণত হয়ে গিয়েছি। আমরা আল্লাহকে হুকুমদাতা হিসেবে বাদ দিয়ে যখন তাঁর নামে প্রশংসা বাক্য পাঠ করি তখন যে আল্লাহ ক্রোধান্বিত হন তা সাধারণ চিন্তায় (Common sense) বোঝা যায়।

অতএব আমাদের এখন কর্তব্য প্রথমে নিজেরা ‘এক আল্লাহর হুকুম ছাড়া আর কারো হুকুম মানি না’ এই কথার উপর ঐক্যবদ্ধ হওয়া ও পরবর্তীতে সকল মানুষকে এর উপর ঐক্যবদ্ধ করা। আমাদের বর্তমানের সংকটময় পরিস্থিতি থেকে রক্ষা পাওয়ার উপায় এই একটিই। আমরা যদি ঐক্যবদ্ধ হয়ে আল্লার হুকুম মেনে নেই তবেই আমাদের সমাজে শান্তি নেমে আসবে। অন্যথায় আমরা যতই তাঁর গুণগান করি না কেন তাতে তিনি আমাদের উপর করুণা করার বদলে আমাদের উপর রাগান্বিত হবেন।

লেখাটি শেয়ার করুন আপনার প্রিয়জনের সাথে

Email
Facebook
Twitter
Skype
WhatsApp
সার্চ করুন

যুক্ত হোন আমাদের ফেসবুক পেজের সাথে...