হেযবুত তওহীদ

মানবতার কল্যাণে নিবেদিত

রসুলাল্লাহর আবির্ভাবের আগে ও পরে

রসুলাল্লাহর আগমনের পটভূমি:

রসুলাল্লাহর আবির্ভাবকালীন বিশ্বে পারস্য, রোম, চীন ও ভারতীয় সভ্যতা ছিল উল্লেখযোগ্য। তন্মধ্যে পারস্য ও রোম সভ্যতা ছিল সর্বাপেক্ষা বিস্তৃত এবং পরাক্রমশালী (সুপার পাওয়ার)। সে সময়ের প্রতিটি সভ্যতার অধীনেই সীমাহীন অন্যায়, অশান্তি, রক্তপাত বিস্তার লাভ করেছিল। যেমন: ধর্মীয়ভাবে পারস্যের অধিবাসীরা ছিল অগ্নি উপাসক। কিন্তু সে ধর্ম সমাজে কোন সুফল বয়ে আনতে পারেনি। ফলে পারাস্য সমাজে অনাচার, অবিচার, যুদ্ধ, বিগ্রহ লেগেই ছিল। নৈতিক অবক্ষয় তাদের মধ্যে এমন পর্যায়ে পৌঁছেছিল যে, পিতা কন্যাকে, ভাই বোনকে পর্যন্ত বিয়ে করত। আর রোমানদের অবস্থাও পারস্যের চেয়ে খুব একটা ভাল ছিল না, খ্রিষ্টান ধর্মালম্বী হলেও তাদের মধ্যে ধর্ম সংক্রান্ত মতানৈক্য, দলাদলির দাবানল চরম আকার ধারণ করেছিল। রসুলাল্লাহর জন্মের মাত্র ছাপ্পান্ন বছর আগে ৫১৪ খ্রিষ্টাব্দে একত্ববাদ থেকে ত্রিত্ববাদের সূচনাকে কেন্দ্র করে রোমীয় খ্রিষ্টানদের মধ্যে এক মহাযুদ্ধ সংঘটিত হয় এবং এ যুদ্ধের ফলে প্রায় পঁয়ষট্টি হাজার খ্রিষ্টান রোম ত্যাগ করতে বাধ্য হয়। এদিকে ভারত উপমহাদেশ সনাতন বা হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা নানা রকম কুসংস্কারে আচ্ছন্ন ছিল। বর্ণবাদের বৈষম্যের বেড়াজালে আটকে পুরো জাতি বিভক্ত হয়ে পড়েছিল। বর্ণবাদের নিষ্পেষণে ভারত উপমহাদেশ চরমভাবে সামাজিক অবক্ষয়ের দিকে ধাবিত হচ্ছিল। অপর দিকে চীনের অধিবাসীরা ছিল বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী। কিন্তু বৌদ্ধ ধর্ম তখনো চীনকে শান্তি দিতে পারেনি বরং সামাজিক অবক্ষয়ে জাতিটা থিতিয়ে পড়েছিল। তৎকালীন বিশ্বের বড় বড় সভ্যতার যখন এই দূরাবস্থা তখন ছোট ছোট জাতিগুলির অবস্থা কি হতে পারে তা সহজেই অনুমান করা যায়।
এমন একটি ছোট্ট জাতি ছিল আরব জাতি। সে সময় আরবের সামাজিক অবস্থা ছিল ভয়াবহ রকমের নৈরাজ্যকর। ব্যক্তিগতভাবে হিংসা-বিদ্বেষ; দলগতভাবে হানাহানি, যুদ্ধ; সামাজিকভাবে হত্যা, লুণ্ঠন, জুয়া, মদ ও ব্যভিচার সমগ্র আরবকে যেন গ্রাস করে ফেলেছিল। তারা আল্লাহকে সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী হিসাবে বিশ্বাস করলেও মানাত, লাত, ওযযা, হাবলসহ শতশত দেবতার উপাসনায় ছিল নিমগ্ন। কাঠ-পাথরের বিভিন্ন মূর্তি দিয়ে তারা কাবাকে কলঙ্কিত করেছিল। শুধু তাই নয়, হজ্ব উপলক্ষ্যে তারা কাবাকে বাণিজ্যিক কেন্দ্র বানিয়ে ফেলেছিল। সে সময় সবচেয়ে বর্বর, অসভ্য, হতদরিদ্র জাতি হিসাবে আরবরা সর্বত্র পরিচিত ছিল।
এক কথায় বলা যায় রসুলাল্লাহর আবির্ভাবের সময় সমস্ত বিশ্বে সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে রাজাধিরাজ পর্যন্ত সকলেই আকণ্ঠ ডুবে ছিল অন্ধকারের সাগরে।
পৃথিবীর এমন ক্রান্তিকালে মহান আল্লাহ সমস্ত মানব জাতির উপর সদয় হলেন। নৈতিক, সামাজিক ও ধর্মীয় সকল বিষয়ে অধঃপতিত আরব জাতির মধ্যে তিনি পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ মহামনব, নবীকূলশিরমনি মোহাম্মদ (সা.) এর আবির্ভাব ঘটালেন।

আইয়্যামে জাহেলিয়াতের সাথে বর্তমানের মিল:

বর্তমানে সমস্ত পৃথিবীর একক কর্তৃত্বকারী ‘সভ্যতা’ হলো ইহুদি খ্রিষ্টান বস্তুবাদী ‘সভ্যতা’ যার প্রভাবাধীন সমস্ত পৃথিবী আজ চরম অন্যায়, অবিচার, শোষণ, বঞ্চনায় পরিপূর্ণ। প্রতিদিনের সংবাদপত্র খুললেই দেখা যায় হত্যা, রাহাজানি, ধর্ষণ, ছিনতাই, যুদ্ধ, আত্মঘাতী বোমাহামলা ইত্যাদি নানা জঘন্য ঘটনায় পরিপূর্ণ আমাদের এই পৃথিবী। আজও পত্রিকার পাতায় তৎকালীন আরব সমাজের মতো দেখতে পাই “বাবার কাছে যৌন নিপীড়নের শিকার হলো নিজ কণ্যা”, “ভারতে বাবা ও ভাইয়ের পৈশাচিক যৌন নিপীড়নের শিকার হতভাগ্য এক নারী” ইত্যাদি আরও জঘন্য সব লোমহর্ষক সংবাদ। পাশ্চাত্য সমাজের নৈতিক অবক্ষয় এমন পর্যায়ে গেছে যে, পৃথিবীর ইতিহাসের সমস্ত রকম যৌনতার রেকর্ড ভেঙ্গে সমলিঙ্গে যৌনতা আইনসিদ্ধ করে নিচ্ছে, ইতর প্রাণীর সাথে যৌনসম্পর্ক স্থাপন করছে এবং বিকৃত যৌনাচারের ভিডিওচিত্র ইন্টারনেটের মাধ্যমে ছড়িয়ে দিচ্ছে সমগ্র পৃথিবীতে। আর আমাদের মত তৃতীয় বিশ্বের হতদরিদ্র জাতিগুলি তাদের পদে পদে অনুসরণ করছে। অন্যায়, অবিচার, জুলুম, নির্যাতন, যুদ্ধ-বিগ্রহ, সামাজিক অবক্ষয়, নৈতিক স্খলনসহ সকল ক্ষেত্রে বর্তমান সমাজ তৎকালীন আরবসমাজের সকল রেকর্ড ভেঙ্গে ফেলেছে।

নবুয়্যত পূর্ববর্তী জীবন:

অন্ধকারাচ্ছন্ন পৃথিবীকে আলোকিত করতে ৫৭০ খ্রিষ্টাব্দে ১২ই রবিউল আউয়াল অর্থাৎ আজকের এই দিনে আরব মরুর বুকে ঝর্ণাধারার মত আবির্ভূত হলেন মানবতার মুক্তির দূত, মানবজাতির আদর্শ মোহাম্মদুর রসুলাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম। রসুলাল্লাহ এই অন্ধকার যুগে জন্মগ্রহণ করলেও আল্লাহ তাঁকে সবধরণের দোষত্রুটি, নোংরামী থেকে সম্পূর্ণরূপে নিষ্কলুষ রেখেছিলেন। ফলশ্রুতিতে যৌবনে তিনি হলেন আরবের সবচেয়ে উত্তম চরিত্রের অধিকারী, সবচেয়ে সত্যবাদী, সর্বাধিক বিশ্বাসভাজন ব্যক্তি। সকল গুণের সমাহারে মহান আল্লাহ তাঁকে এমন সুমহান চরিত্রের অধিকারী করলেন যে আরবদের কাছে তিনি ‘আল আমিন’ বলে পরিচিত হয়ে গেলেন।
মানুষের বিপদাপদ, সামাজিক সংস্কার নবুয়ত প্রাপ্তির আগেও রসুলাল্লাহর স্বাভাবজাত ছিল। ‘হিলফুল ফুজুল’ নামক একটি স্বেচ্ছাসেবী আন্দোলনের মাধ্যমে তিনি সমাজ কল্যাণে আনুষ্ঠানিকভাবে ব্রত হয়েছিলেন। যদিও হেদায়াহ্হীন ‘হিলফুল ফুজুল’ এর কার্যক্রম বেশিদিন স্থায়ী হয়নি। আর স্থায়ী হলেও রসুল্লাহর জন্য এর কোন প্রয়োজন ছিল না। কারণ আল্লাহ তাকে সমাজ সংস্কারের মত ছোখাট কোন দায়িত্ব দিয়ে পাঠাননি। তাঁকে আল্লাহ দায়িত্ব দিলেন সব রকমের কুসংস্কার, অতীতের বিকৃত ধর্ম ও মানুষের মনগড়া বিধান সম্বলিত জীবনব্যবস্থা ভেঙে দিয়ে আল্লাহ প্রদত্ত ‘সত্যদীন’ প্রতিষ্ঠার কাজ।

নবুয়্যতের দায়িত্ব পালন:

রসুলাল্লাহ তৎকালীন সমাজের অন্যায়, অবিচার, জুলুম, যুদ্ধ-বিগ্রহ দেখে সর্বদা চিন্তা করতেন কিভাবে এই অশান্তি থেকে মানবজাতিকে মুক্ত করে শান্তি ফিরিয়ে আনা যায়। চল্লিশ বছর বয়সের মোহাম্মদ (সা.) এই চিন্তাগুলি নিয়ে যখন হেরা গুহায় ধ্যানমগ্ন তখন পূর্বপরিকল্পনা মোতাবেক আল্লাহপাক তাঁকে বিশাল এক দায়িত্ব দিয়ে মনোনীত করলেন শেষ নবী ও রসুল হিসেবে। রসুলাল্লাহকে আল্লাহ বুঝিয়ে দিলেন কেন আজ সমাজ এত অশান্তিতে পূর্ণ এবং কিভাবে সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠিত হবে। রসুলাল্লাহ বুঝলেন সমাজে সমস্তরকম অশান্তির মূল কারণ আল্লাহকে হুকুমদাতা হিসাবে না মানা। লাত, মানাত, ওয্যা, হাবল ইত্যাদি দেবদেবীর নামে নিজেদের মস্তিষ্কপ্রসূত আইন-কানুন দিয়ে সমাজ পরিচালনার জন্যই সমাজে চরম অশান্তি বিরাজ করছিল যেমন বর্তমান সমাজেও আল্লাহর আইন বাদ দিয়ে মানবরচিত আইন-বিধান দিয়ে সমাজ পরিচালিত হয় বলে সমাজে এত অশান্তি বিরাজ করছে। তাই রসুলাল্লাহ প্রথমেই আরবজাতিকে বোললেন, “তোমরা বল, আল্লাহ ছাড়া কোন হুকুমদাতা নাই, তাহোলে আল্লাহ তোমাদের জান্নাতে দাখিল করবেন।” তিনি দীর্ঘ ১৩বছর অর্থাৎ মক্কার জীবনের সম্পূর্ণ সময় শুধু এই কলেমার দাওয়াত বা আল্লাহর তওহীদের দাওয়াত দিয়ে গেলেন। এই সময়ে তিনি নানা রকম নির্যাতনের মধ্যে নিপতিত হয়েছেন কিন্তু দৃঢ় প্রত্যয়ে সবর করেছেন এবং তওহীদের বালাগ চালিয়ে গেছেন, একটি বারের জন্যও নির্যাতন কারীদের বিরুদ্ধে বদদোয়া করেন নি। মক্কার জীবনে তিনি কোন কেতাল অর্থাৎ সশস্ত্র সংগ্রাম করেন নি।
রসুলাল্লাহর দায়িত্বকে পবিত্র কোর’আনে আল্লাহ স্পষ্ট করে দিয়েছেন এই বলে হেদায়াহ (সঠিক দিক নির্দেশনা) ও সত্যদিনসহ আপন রসুলকে প্রেরণ করেছি এজন্য যে তিনি যেন অন্য সমস্ত দিনের ওপর একে বিজয়ী করেন। (আল কোর’আন- সুরা ফাতাহ-২৮, তওবা-৩৩, সফ-৯)। রসুলাল্লাহ তাঁর ওপর অর্পিত দায়িত্ব এবং এর ফলাফল সম্পর্কে ছিলেন সম্পূর্ণ সচেতন। মক্কায় যখন রসুলাল্লাহ ও তাঁর সাহাবীদের ওপর অকথ্য নির্যাতন চলছিল, সে সময় একদিন তিনি কাবার দেয়ালে হেলান দিয়ে বসে ছিলেন। হঠাৎ কাফেরদের নিষ্ঠুরতম নির্যাতনের শিকার খাব্বাব (রা.) এসে বোললেন, ‘হে আল্লাহর রসুল! এই অত্যাচার নিপীড়ন আর সহ্য হচ্ছে না। আপনি আল্লাহর কাছে দোয়া করুন আমাদের বিরোধীরা সব যেন ধ্বংস হয়ে যায়।’ তিনি সোজা হয়ে বসলেন এবং খাব্বাব (রা.)-কে বোললেন, ‘তুমি কী বোললে? সাহাবা তার কথার পুনরাবৃত্তি করলেন। শুনে আল্লাহর রসুল তাকে বোললেন, ‘শোন, শীঘ্রই সময় আসছে যখন কোন যুবতী মেয়ে গায়ে গহনা পরে একা সা’না থেকে হাদরামাউদ যাবে। তার মনে এক আল্লাহ এবং বন্য জন্তু ছাড়া আর কোন ভয় থাকবে না।’ না এটা খাব্বাব (রা.) কে দেয়া রসুলের কোন অভয় ছিল না, বরং তিনি সম্পূর্ণ সচেতনভাবেই কথাটি বোলেছেন।
মক্কাবাসীর সকল বিরোধিতা উপেক্ষা করে রসুল তাঁর ওপর অর্পিত দায়িত্ব কাঁধে নিয়ে যাত্রা শুরু করলেন। তিনি বোলতে থাকলেন ‘লা এলাহ এল্লাল্লাহ’ অর্থাৎ আল্লাহ ছাড়া কোন হুকুমদাতা-বিধানদাতা নাই। কালেমার এই বাক্য অর্থাৎ জীবনের সর্ব ক্ষেত্রে আল্লাহ ও তাঁর রসুলের হুকুমের স্থলে অন্য কারো হুকুম মানব না। মাত্র কয়েকশজন ব্যতীত সমস্ত মক্কাবাসী রসুলকে প্রত্যাখান কোরল একই সাথে দমন, নিপীড়ন চালাতে আরম্ভ কোরল। তাদের অত্যচার চরম সীমায় পৌঁছুলে রসুলাল্লাহ তাঁর আসহাবদের সঙ্গে নিয়ে মদীনায় হেজরত করলেন।
এখানে একটি বিষয় উল্লেখ না করলেই নয়, মক্কার তের বছর অবস্থান করলেও রসুলাল্লাহ সে সমাজের কোন অন্যায়কে সংস্কার করতে এগিয়ে জাননি, কারণ বিষবৃক্ষের ফল একটি একটি করে না ছিঁড়ে তিনি বিষবৃক্ষটি সমূলে উপড়ে ফেলার কাজে হাত দিয়েছিলেন। তিনি জানতেন আল্লাহর দেয়া সত্যদীনের বিধান প্রতিষ্ঠা করতে পারলে সমাজকে পুরাতন বিল্ডিংএর মত পরতে পরতে সংস্কার করার প্রয়োজন থাকবে না।
যা হোক, আল্লাহ তাঁর অসীম রহমতে মদিনাকে রসুলাল্লাহর হাতে তুলে দিলেন। অল্পদিনের মধ্যেই দীনুল হকের সত্যের আলোকচ্ছটা মদিনাকে আলোকিত করে ফেলল। যে সমাজে চুরি, ডাকাতি, রাহাজানি, হত্যা, লুন্ঠন, জুয়া, জেনা, সুদ ইত্যাদি ছিল নিত্য নৈমিত্তিক বিষয়, যেখানে মেয়েদের কোন নিরাপত্তা ছিল না, দীনুল হক প্রতিষ্ঠার সঙ্গে সঙ্গে যেন ঠিক তার বিপরীত হয়ে গেল, নতুন এক সমাজ প্রতিষ্ঠা হলো। সে সমাজের পুরাতন কোন সমস্যা আলাদাভাবে রসুলকে সংস্কার করতে হলো না। কিন্তু শুধুমাত্র মদীনায় দীনুল হক প্রতিষ্ঠা রসুলের দায়িত্ব ছিল না ছিল দুনিয়াব্যাপী। তথাপি চতুর্থ হেজরী পর্যন্ত বদর, ওহদ, খন্দক যুদ্ধ এবং ইহুদিদের সন্ধি ভঙ্গের দরুন তাদের দমনে রসুলাল্লাহর সময় ব্যয় হয়ে গেল। পঞ্চম হেজরীতে হুদায়বিয়ার সন্ধির মাধ্যমে মদীনায় স্থিরতা আসলে রসুল মোটেই কালক্ষেপণ করলেন না। তিনি ঝড়ের বেগে সাহাবীদের নিয়ে বহির্গত হলেন। আল্লাহর সাহায্যে মাত্র পাঁচ বছরের মধ্যে আরব উপদ্বীপেবর বাকি সবটুকু দীনুল হকের ছায়াতলে চলে এলো। আরববাসী এবার প্রত্যক্ষ করল দীনুল হকের নির্যাস ‘ইসলাম’ শান্তি। মক্কায় অবস্থানকালে খাব্বাব (রা.) কে বলা সে কথা বাস্তবে পরিণত হলো। রসুল এমন এক শান্তির সমাজ গড়লেন যে সত্যই একজন যুবতী স্বর্ণ অলঙ্কার পরে নির্ভয়ে দু-তিনশত মাইল এককি পথ চলল। কেউ ভুল করে চুরি করে ফেললে, বা রিপুর তাড়নায় ব্যভিচার করে ফেললে সে এসে বলল আমি ব্যভিচার করেছি, আমাকে শাস্তি দিন। এমনকি সমাজে সকলে অস্ত্র নিয়ে ঘোরাফেরা করত কিন্তু পাহারা দেওয়ার জন্য কোন পুলিস রাখা হলোনা এবং সমাজে কোন অন্যায়ও সংঘটিত হলো না। এমনও হলো যে, আদালতে বিচারক বসে অপেক্ষা করতেন কিন্তু তার কাছে কোন অপরাধ সংক্রান্ত মামলা আসতো না। এর চেয়ে শান্তি, আর কি হতে পারে?
শুধু আরব উপদ্বীপে দীনুল হক প্রতিষ্ঠার পর রসুলাল্লাহ প্রত্যক্ষ দুনিয়া থেকে বিদায় নিলেন। বিদায়ের আগে তিনি বাকি দুনিয়ায় আল্লাহর সত্যদীন প্রতিষ্ঠা করার জন্য দায়িত্ব দিয়ে গেলেন নিজ হাতে গড়া জাতিটির উপর, যার নাম উম্মতে মোহাম্মদী।

আসহাবদের দায়িত্ব পালন এবং পরবর্তীদের উদাসীনতা:

রসুলের এন্তেকালের পর এ জাতিটি মোটেই কালক্ষেপণ কোরল না, তাঁরা খরোস্রোতা নদীর মত প্রচ- গতিতে দুনিয়ার বুকে ছড়িয়ে পড়লো। ফলশ্রুততি মাত্র ষাট সত্তর বছরের মধ্যে তৎকালীন পরাশক্তি রোম ও পারস্য সাম্রাজ্য সে খরস্রোতে বিলীন হয়ে গেল। অর্ধেকেরও বেশি দুনিয়ায় ইসলাম প্রতিষ্ঠা হলো। তারপর হঠাৎ এ খরোস্রোতা নদীর স্রোত গতিহীন হতে থাকলো। এ জাতি ভুলে যেতে থাকলো যে কেন তাদেরকে সৃষ্টি করা হয়েছে। তারা বাকি দুনিয়াতে আল্লাহর দীন প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম ত্যাগ কোরল। শুরু কোরল বাদশাহী, ভোগ বিলাস আর দীন নিয়ে সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম বিশ্লেষণ ও মাসলা ফতোয়া নিয়ে গবেষণা। তখন থেকে বর্তমানের ইতিহাস সবারই জানা।

লেখাটি শেয়ার করুন আপনার প্রিয়জনের সাথে

Email
Facebook
Twitter
Skype
WhatsApp
সার্চ করুন

যুক্ত হোন আমাদের ফেসবুক পেজের সাথে...