হেযবুত তওহীদ

মানবতার কল্যাণে নিবেদিত

মানুষের ঈমানকে হাইজ্যাক করা হয় যেভাবে

মোহাম্মদ আসাদ আলী
মানুষের ধর্মবিশ্বাস বা ঈমান একটি অমূল্য সম্পদ। আজ থেকে ১৪০০ বছর পূর্বে পশ্চাদপদ, দারিদ্র্য-ক্ষুধায় জর্জরিত, নিজেরা নিজেরা হানাহানি-রক্তপাতে নিমজ্জিত ও কুসংস্কারে আচ্ছন্ন আরবদেরকে যে শক্তিটি অল্পদিনের ভেতরে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠত্বের আসনে নিয়ে গিয়েছিল তা হচ্ছে ‘ঈমান’। আজও পৃথিবীর বুকে মাথা তুলে দাঁড়াতে একটি জাতির ‘ঈমানী শক্তি’ বিরাট ভূমিকা পালন করতে পারে। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক ব্যাপার হচ্ছে, মুসলিম নামক জাতিটির ‘ঈমান’ নামক মহাশক্তিটি আজকে বিভিন্ন শ্রেণির দ্বারা হাইজ্যাক হয়ে অপব্যবহার হচ্ছে। এককালে যে ঈমান এই জাতির উত্তরোত্তর উন্নতি ও প্রগতির পথ প্রশস্ত করেছিল, এই জাতিকে অন্য সমস্ত জাতির শিক্ষক বানিয়ে দিয়েছিল, মর্যাদা ও সম্মানের চূড়ান্ত সোপানে পদার্পণ করিয়েছিল, সেই ঈমানই এখন ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে কেবল ভুল খাতে প্রবাহিত হবার কারণে।
বর্তমানে তিনটি উপায়ে মানুষের ঈমানকে হাইজ্যাক করা হচ্ছে। সেগুলো হচ্ছে-
ব্যক্তি-স্বার্থোদ্ধার: একটি শ্রেণি ধর্মকে অর্থোপার্জনের মাধ্যম হিসেবে কাজে লাগাচ্ছে। আল্লাহ দ্বীনের কাজ করে বিনিময় গ্রহণ হারাম ঘোষণা করলেও এই শ্রেণিটি আল্লাহর হুকুম গোপন করে রেখে দ্বীন প্রচারের অজুহাতে অর্থোপার্জনে নেমেছে। মানুষকে বোঝানো হয় এই শ্রেণিটি আল্লাহর খুব প্রিয় বান্দা, কাজেই তাদেরকে সন্তুষ্ট করতে পারলে, তাদেরকে দান করলে আল্লাহ খুশি হবেন, হাশরের দিন তারা আল্লাহর কাছে দানকারীর হয়ে সুপারিশ করবেন ইত্যাদি। এভাবে মানুষের ঈমানকে কাজে লাগিয়ে অর্থনৈতিক স্বার্থ হাসিল করছে একটি গোষ্ঠী।
রাজনৈতিক স্বার্থোদ্ধার: আরেকটি শ্রেণি মানুষের ধর্মবিশ্বাস বা ঈমানকে ব্যবহার করে রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিল করছে। দলের সাথে ‘ইসলামী’ লেবেল এঁটে দিয়ে ধর্মবিশ্বাসী মানুষের সাথে প্রতারণা করা হয়। ধর্মবিশ্বাসী মানুষের কাছে গিয়ে বলা হয়, অমুক মার্কায় ভোট দিলে সেটা জান্নাতের টিকিট হিসেবে পরিগণিত হবে। অন্যদিকে প্রতিপক্ষ দলগুলোকে কাফের, মুরতাদ, মুনাফেক ইত্যাদি আখ্যা দেওয়া হয় এবং বলা হয় ঐসব দলে ভোট দিলে কাফের হয়ে যাবে, ঈমান থাকবে না। এভাবে ধর্মভীরু মানুষের ঈমানকে ক্ষমতায় যাবার সিঁড়ি হিসেবে কাজে লাগায় একটি গোষ্ঠী। এছাড়া রাজনৈতিক সুবিধা হাসিলের স্বার্থে তারা প্রায়ই অন্য ধর্মের বিরুদ্ধে বিষোদগার করে থাকে যাতে করে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা-হাঙ্গামা লেগে যায় এবং তারও ফসল ঘরে তোলে ঐ ধর্ম নিয়ে অপরাজনীতিকারী দলগুলোই। তবে ধর্মভিত্তিক দলগুলোই কেবল এ ধরনের সুবিধা নেয়, সেক্যুলাররা নেয় না তা কিন্তু নয়। ক্ষেত্রবিশেষে সেক্যুলার দলগুলোও বিভিন্ন ধর্মভিত্তিক সংগঠন, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান ইত্যাদির আনুকুল্য পেতে মুখিয়ে থাকেন এবং এর দ্বারা তারাও ধর্মবিশ্বাসী মানুষের ঈমানকে নিজেদের রাজনৈতিক স্বার্থসিদ্ধিতে অপব্যবহার করেন।
জঙ্গিবাদী কর্মকা-: বলা যেতে পারে- ধর্মবিশ্বাস বা ঈমানের সবচাইতে ক্ষতিকর অপব্যবহারটির নাম জঙ্গিবাদ। মুসলিম তরুণরা আল্লাহ, রসুল ও ইসলামের জন্য কিছু করতে চায়। উপরন্তু বিশ্বব্যাপী মুসলিম জাতিটির উপর যে অবর্ণনীয় নির্যাতন চলছে, সা¤্রাজ্যবাদী আগ্রাসন চলছে, সে থেকে জাতিকে বাঁচানোর উপায় সন্ধান করেন এই তরুণরা। এক্ষেত্রে তাদের ঈমানের সঠিক ব্যবহার করা গেলে জাতি বহুলাংশে উপকৃত হতে পারত। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে এই ঈমানদার তরুণদের ঈমান হাইজ্যাক করে তাদেরকে জঙ্গিবাদী আদর্শে দীক্ষিত করা হচ্ছে। কোর’আন-হাদীসের ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে, এখান থেকে একটা আয়াত, ওখান থেকে একটা আয়াত তুলে ধরে তাদেরকে প্ররোচিত করা হচ্ছে নিরীহ মানুষ হত্যার কাজে। এই বিকৃত আদর্শ তাদের জীবনকে তো শেষ করে দিচ্ছেই, সেই সাথে মুসলিম জাতিটিকেও ক্রমশই বীভৎস পরিস্থিতির দিকে ঠেলে দিচ্ছে।
এইভাবে একটি অমূল্য সম্পদ ‘ঈমান’কে হাইজ্যাক করে ভুল খাতে প্রবাহিত করা হচ্ছে যুগের পর যুগ ধরে। আজ সময় এসেছে এ কথা উপলব্ধি করার যে, এগুলো কোনোটাই আল্লাহ-রসুলের প্রকৃত ইসলাম নয়।

সার্চ করুন

যুক্ত হোন আমাদের ফেসবুক পেজের সাথে...