হেযবুত তওহীদ

মানবতার কল্যাণে নিবেদিত

নিউজিল্যান্ডে মসজিদের হামলাই কী শেষ?

মুস্তাফিজ শিহাব

নিউজিল্যান্ডের ঘটে যাওয়া সন্ত্রাসী হামলার মতো ঘটনা মুসলিমদের সাথে প্রথমবার ঘটেনি। সারা পৃথিবীতে মুসলিমদের উপর এ ধরনের হামলা নিত্যদিন চলছে। আমি নিশ্চিত, যারা সচেতন ও বিবেকবান ও ন্যূনতম পত্র-পত্রিকা পড়েন তারা কেউই আমার কথার সাথে দ্বিমত পোষণ করবেন না।
পত্র-পত্রিকায় প্রায় প্রতিদিনই মুসলিমদের উপর হওয়া অত্যাচার ও নির্যাতনের খবর প্রকাশিত হয়। ফিলিস্তিনে গত ৭০ বছর ধরে মুসলমানদের পাখির মত গুলি করে হত্যা করা হচ্ছে যে ঘটনা আমাদের সবার সামনে পরিষ্কার। মিয়ানমার থেকে বিতারিত করা হলো লক্ষ লক্ষ মুসলিমদের যারা এখন উদ্বাস্তু। ইরাক ধ্বংস হলো, লিবিয়া ধ্বংস হলো, আফগানিস্তান মাটির সাথে মিশে গেল। সমগ্র দুনিয়া দেখল কিন্তু কোনো কথাই বলল না। নির্বিচারে হত্যা করা হলো কোটি কোটি মুসলিম ধর্মাবলম্বী জনগণকে।
ইতিহাস দেখলেই প্রমাণ মিলবে মুসলমানদের উপর এ ধরনের হামলা এর আগেও হয়েছে। মুসলমানরা ইতিহাস ভুলে গিয়েছে কিন্তু সাম্প্রাদায়িক চেতনায় উদ্বুদ্ধ পাশ্চাত্য সা¤্রাজ্যবাদীরা ইতিহাস ভুলেনি। মুসলমানরা ভুলে গিয়েছে যে আটশ বছরের ইসলামী শাসনতন্ত্রকে কীভাবে আন্দালুসিয়া, বর্তমানে স্পেন থেকে উৎখাত করা হয়। হাজার হাজার মুসলিমদের মসজিদে বন্দি করে আগুনে পুড়িয়ে হত্যা করা হয়। মুসলিমরা আজ ভুলে গিয়েছে ১৯৯২-৯৫ সাল পর্যন্ত বসনিয়ায় সার্ব সৈন্যরা নির্বিচারে মুসলিমদের হত্যা করেছিল। দুই লক্ষ নারীকে ধর্ষণ করে আটকে রাখা হয়েছিল যাতে তারা গর্ভপাত ঘটাতে না পারে এবং তাদের গর্ভে সার্বিয়ান শিশু জন্মগ্রহণ করে।
নিউজিল্যান্ডের ঘটনায় ভিডিও যারা দেখেছেন তারা সকলেই খেয়াল করলেই শুনবেন সন্ত্রাসী ব্রেন্টন টারান্ট হামলার পূর্বে যে গানটি শুনছিল তা এই সার্ব সৈন্যদের রণসঙ্গীত। বসনিয়ায় হামলার সময় এই রণসঙ্গীত বাজিয়েই তাদের মধ্যে চেতনার সঞ্চার ঘটানো হয়েছিল। তারা সেই সাম্প্রদায়িক মনভাবকে লালন করে চলেছে। এছাড়াও তার বন্দুকে উপর ‘কার্ল’ লেখা ছিল। এই ‘কার্ল’ সম্পর্কেও আমরা অজ্ঞ। এ সেই ইউরোপিয়ান কার্ল মার্টেল যে কিনা মুসলিমদের সাথে ইউরোপের সর্বশেষ যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়েছিল এবং ‘ভাগ্যক্রমে’ বিজয়ী হয়েছিল। ‘ভাগ্যক্রমে’ বলার কারণ হচ্ছে বিভিন্ন ঐতিহাসিকগণই এ যুদ্ধে জয়ের ব্যাখ্যা এভাবেই প্রদান করেছেন। ঐতিহাসিক ট্রেডোর-রোপারের মতে, কার্ল মার্টেলের কারণে আরবরা পরাজিত হয়নি, বরং তারা পরাজিত হয়েছিল আনুষাঙ্গিক প্রয়োজন এবং সহায়ক সামগ্রীর অভাবের জন্য। (বালাত আশ শুহাদা, গৌরবদীপ্ত জিহাদ, লেঃ কর্নেল এম. এম. কোরেশী)।” তারা মুসলিমদের নিয়ে সাম্প্রদায়িক মনোভব আজও লালন করে যে কথা স্বয়ং ব্রেন্টন টারান্ট ধরা পড়া পর স্বীকার করেছে।
নিউজিল্যান্ডের মসজিদের হামলায় প্রতিটি বিবেকবান মানুষের টনক নড়া উচিত। পৃথিবীব্যাপী মুসলিমদের দুর্দশা নিয়ে ভাবার সময় অবশ্যই হয়েছে। তবে এ ঘটনা ফের একবার প্রমাণ করে যে সাম্প্রদায়িক, সা¤্রাজ্যবাদী, জঙ্গিবাদী, সন্ত্রাসী মনভাব মুসলিমদের থেকে উৎপন্ন হয়নি, উৎপন্ন হয়েছে পাশ্চাত্যের অস্ত্রব্যবসায়ী, সা¤্রাজ্যবাদীদের কাছ থেকে। তারা এতদিন ধরে তাদের স্বার্থ হাসিলের জন্য মুসলমানদের ঘুঁটি হিসেবে ব্যবহার করে গিয়েছে। তাই আমাদের করণীয় নিয়ে ভাবতে হবে, আমাদের বর্তমান মুসলিম জাতির এ দুর্দশা নিয়ে চিন্তা করতে হবে। এ জঘন্য পরিস্থিতি থেকে যত দ্রুত সম্ভব বেরিয়ে আসতে হবে।
আমাদের করণীয় হতে হবে পাকাপোক্ত। এ ধরনের একটি ঘটনা ঘটে, গণমাধ্যমে মাধ্যমে বাতাসের আগে ছড়িয়ে পরে এবং এরই ধারাবাহিকতায় আমরা নিন্দা জানাই, প্রতিবাদ জানাই, মিছিল করি, মিটিং করি, ব্যাস শেষ! কিন্তু এভাবে কোনো সমাধানেই আসতে পারি না। এতে কোনো হামালাই বন্ধ হয় না। ইরাক ধ্বংস হলো, আফগান মাটির সাথে মিশল, লিবিয়া ধ্বংস হলো, মিয়ানমারে তা-ব চালানো হলো রোহিঙ্গাদের উপর কিন্তু আমরা করার মতো কিছুই করতে পারি নি। তাই আমাদের এখন পরিকল্পনামাফিক এগিয়ে যেতে হবে যাতে করে আমরা পাকাপোক্তভাবে একটি সমাধানের পথে হাঁটতে পারি।
মুসলিম জাতিকে রক্ষা ও আমাদের এই সোনার বাংলাদেশকেও তাদের কালো থাবা থেকে রক্ষার জন্য সর্বপ্রথম আমাদের দুইটি পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। প্রথমত আমাদের দেশে যে সকল আলেমগণ ধর্মের কাজ করে বিনিময় গ্রহণ করছেন এবং ধর্মের বিকৃত ব্যাখ্যা প্রদানের মাধ্যমে নিজেদের স্বার্থ হাসিল করছেন তাদের এই কাজ থেকে সরে আসতে হবে। সাধারণ জনগণকেও মনে রাখতে হবে আলেম দুই প্রকার। হাক্কানী আলেম ও ধর্মব্যবসায়ী আলেম। সাধারণ জনগণদের ধর্মব্যবসায়ী আলেমদের থেকে সচেতন থাকতে হবে এবং যারা ধর্মব্যবসা করছেন তাদের এর থেকে যতদ্রুত সম্ভব সরে আসতে হবে। জনগণ আলেমদের বিশ্বাস করে তাই আলেমরা যদি তাদের ক্ষুদ্রস্বার্থ ত্যাগ করে জাতির কল্যাণে নিজেদের জ্ঞানকে ব্যবহার করে তবে জাতি উপকৃত হবে।
দ্বিতীয়ত আমাদের ঐক্যবদ্ধ হওয়া বাঞ্চনীয়। আল্লাহর রসুল আরবের অন্ধকার যুগের অন্ধকারাচ্ছন্ন মানুষদের সর্বপ্রথম তওহীদের, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ অর্থাৎ আল্লাহ ছাড়া আর কারো হুকুম মানি না, উপর ঐক্যবদ্ধ করেছেন। জাতি ছিল পাঁচ দফার উপর প্রতিষ্ঠিত। সেই পাঁচ দফা আজ মুসলিম জাতি ভুলে গিয়েছে। “হারেস আশআরী (রাঃ.) হতে বর্ণিত, রসুল (স.) বলেন, আমি তোমাদেরকে পাঁচটি কাজের আদেশ করছি; যা আল্লাহ আমাকে নির্দেশ দিয়েছেন। ঐক্যবদ্ধ থাকবে, নেতার আদেশ শুনবে (শৃঙ্খলা), নেতার আদেশ পালন করবে(আনুগত্য), হেজরত করবে (যাবতীয় অন্যায় ত্যাগ করা), জেহাদ করবে (ন্যায় প্রতিষ্ঠায় সর্বোচ্চ প্রচেষ্ঠা)। যদি কেউ এই পাঁচ দফা কর্মসূচি থেকে এক বিঘত সরে যায় তবে তার গলা থেকে ইসলামের রশি খুলে যাবে আর যদি কেউ এর বদলে জাহেলি যুগের (অন্য কোনো দফা/ ব্যবস্থা) দিকে আহ্বান করে তবে সে যদি সালাহ করে ও সওমও পালন করে তবুও সে জাহান্নামিদের দলভূক্ত (মেশকাত, তিরমিজী, ইবনে মাজাহ)।”
আজ সমগ্র মুসলিম জাতি এ পাঁচ দফাকে বাদ দিয়ে দাজ্জাল তথা ইহুদি খ্রিষ্টান পাশ্চাত্য বস্তুবাদী ‘সভ্যতা’র প্রণীত জীবনবিধান মেনে চলছে। মুসলিম জাতি আজ হাজার হাজার দল-উপদল, ফেরকা-মাজহাবে বিভক্ত। এ কারণেই আজ বিশ্বব্যাপী আমরা বিপর্যস্ত। আজকে আমাদের সর্বত্র হত্য করা হচ্ছে। মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশগুলোকে এক এক করে বোমা মেরে ধ্বংস করে দেয়া হচ্ছে, লক্ষ লক্ষ মা ও বোনদের ধর্ষণ করা হচ্ছে। কোটি কোটি মুসলমান আজ ইউরোপ-আমেরিকায় ভিক্ষা করে বেড়াচ্ছে। একসময়ের দুর্দান্ত প্রতাপশালী ন্যায়প্রতিষ্ঠায় আত্মত্যাগকারী মুসলিম জাতি আজ বিশ্বময় এক অভিশপ্ত জাতিতে পরিণত হয়েছে। মুসলমানদের এই মার খাওয়ার ইতিহাস আজকের নয়। গত কয়েক শতাব্দী ধরেই মার খেয়ে যাচ্ছে।
আমরা, হেযবুত তওহীদ, অনেক আগে থেকেই সমগ্র জাতির সামনে এ সত্য তুলে ধরছি এবং সমগ্র জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করার সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছি। আমরা সকল অন্যায়ের বিরুদ্ধে হব ঐক্যবদ্ধ। ব্যক্তি কোন ধর্মের, কোন বর্ণের, কোন জাতের, ধনী না দরিদ্র, শক্তিশালী না দুর্বল ইত্যাদি কোনো পরিচয়ই ন্যায়ের পথে বাধা হবে না। হিন্দু হোক, মুসলিম হোক, খ্রিষ্টান হোক বা বৌদ্ধই হোক যে-ই অন্যায় করবে সে-ই শাস্তি লাভ করবে। যে সন্ত্রাস করবে সেই সন্ত্রাসী, সেই শাস্তির অধিকারী। এই সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে সমগ্র জাতিকে এখন ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। দাজ্জাল যে ত্রাসের রাজত্ব সারা দুনিয়ায় প্রতিষ্ঠা করেছে সে ত্রাসের রাজত্বকে আমাদের সম্মিলিতভাবে ধ্বংস করে ন্যায়-শান্তি-সুবিচার প্রতিষ্ঠা করতে হবে।
আজকের এই কাজটিই যদি কোনো মুসলিম যুবক করত তবে নির্ঘাত সমগ্র মুসলিম জাতির উপর নেমে আসত অভিশাপ। কিন্তু একই ঘটনা যখন পাশ্চাত্যের আদর্শে আদর্শিত কেউ ঘটায় তখন তারাই হয় ‘মানসিক রোগী’। তাই মুসলিমদের এখন ঐক্যবদ্ধভাবে সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে। রসুলের আনীত প্রকৃত ইসলামের আদর্শ দ্বারা মুসলিম জাতি হয়ে উঠবে সন্ত্রাসের ত্রাস।
আমরা হেযবুত তওহীদ এই অন্যায়ের বিরুদ্ধেই দাঁড়িয়েছি। আমরা দাঁড়িয়েছি এই বিপর্যস্ত জাতিকে উদ্ধার করার জন্য। আমরা সমগ্র জাতিকে সাম্প্রদায়িকতা, সা¤্রাজ্যবাদ, সন্ত্রাসবাদ, জঙ্গিবাদ, মাদক অর্থাৎ যাবতীয় অন্যায়ের বিরুদ্ধে ইস্পাত কঠিন ঐক্যে ঐক্যবদ্ধ করা প্রচেষ্টা করছি। আপনারা কী ভাববেন না? এখনই কী মুসলিম জাতির হুশ হবে না?

লেখাটি শেয়ার করুন আপনার প্রিয়জনের সাথে

Email
Facebook
Twitter
Skype
WhatsApp
সার্চ করুন

যুক্ত হোন আমাদের ফেসবুক পেজের সাথে...