হেযবুত তওহীদ

মানবতার কল্যাণে নিবেদিত

ধর্মনিরপেক্ষতার বিষফল

আদিবা ইসলাম
একটি সমাজের অবক্ষয় হঠাৎ করে একদিনে হয় না। দীর্ঘদিনের কাল পরিক্রমায় হাজার বছরের অন্যায় জমা হতে হতে তা ধ্বংসের দাঁড়গোড়ায় এসে পৌঁছায়। আজকে আমাদের সমাজের এই চূড়ান্ত অবনতি, নিদারুণ দৈন্যদশা, মানুষের এত নৈতিক অধঃপতনও একদিনে হয় নি। কয়েকশত বছরের পাপ জমা হতে হতে, পূর্বপুরুষদের কর্মের বিষফল এখন আমরা ভোগ করছি। বিষবৃক্ষ থেকে তো আর অমৃত আশা করা যায় না, বিষবৃক্ষ তো বিষফলই দিবে।
আজকে আমাদের এই সমাজব্যবস্থা একটি বিষফলেরই চূড়ান্ত রূপ। যতই দিন যাচ্ছে ততই যেন মানুষের সমাজে বসবাস অসম্ভব হয়ে পড়ছে। দিন দিন হু হু করে বেড়ে চলেছে সমাজের অন্যায়, অবিচার, খুন, হত্যা, গুম, রাহাজানি, ধর্ষণ, পরকীয়া, দ্বন্দ্ব ইত্যাদি। এ যেন স্বার্থের হলিখেলায় মেতে উঠেছে সবাই। প্রতিটি ঘরে ঘরে মানুষের আহাজারি। কোথাও শান্তি নেই। মানুষ তার আতিœক অধঃপতনের সর্ব নি¤œস্তরে আজ দাঁড়িয়ে আছে। তার না আছে কোনো আবেগ-অনুভূতি, না আছে কোনো চেতনা, আর না আছে মনুষ্যত্ববোধ।
ঘরের বাইরে বের হলে বুকের ভেতর ধুপ ধুপ করতে থাকে, আজ নিরাপদে ঘরে ফিরতে পারব কি না এই আশঙ্কায়। সমাজের এমন কোনো একটা স্তর নেই যেখানে দুর্নীতি গিয়ে পৌছায় নি। পুরো জীবনব্যস্থাটা দাঁড়িয়ে আছে এই দুর্নীতির উপর। বরং যে দুর্নীতির বাইরে চলতে চাইবে তার জীবনে নেমে আসবে ঘোর অমানিশা। আজ ঘর থেকে শুরু করে পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্র কেউই এই গ-ির বাইরে যেতে পারছে না। এই দাজ্জালীয় সভ্যতা মানুষের বস্তুগত উন্নতি করেছে ঠিকই কিন্তু তার আতিœক-নৈতিক পতন ঘটিয়েছে, তাকে পশুর চেয়েও নিকৃষ্ট করেছে। তার কাছে মা, বোন আর স্ত্রীতে কোনো পার্থক্য নেই।
সন্তান তার পিতা মাতাকে খুন করছে কিংবা পিতা-মাতাই তার সন্তানকে খুন করছে অথবা স্বামী স্ত্রীকে খুন করছে, স্ত্রী স্বামীকে খুন করছে। প্রতিটি ঘরে ঘরে পরকিয়ায় বলি হচ্ছে হাজারো জীবন। দৈনিক পত্রিকার পাতা খুললে এখন শুধু এই ঘটনাগুলোই চোখে পড়ে। এক একটি ঘটনার লোমহর্ষক বর্ণণা শুনলে গা শিউরে উঠে। এমন একটি সমাজে দাঁড়িয়ে আমরা যখন সভ্যতার বড়াই করি, আধুনিকতার মোড়কে সভ্য সাজি তখন তা কতটা হাস্যকর ঠেকে?

গত দশ বছরের কেবল ধষর্ণের পরিসংখ্যান এখানে তুলে ধরা হলো:

সাল –       ধর্ষণের পরিমাণ
২০০৮    –     ৪৩৯ জন
২০০৯    –     ৫৩৯ জন
২০১০    –      ৭০০ জন
২০১১    –      ৮০০ জন
২০১২    –     ৬৬৫ জন
২০১৩      –     ৮৮১ জন
২০১৪        –     ৮৪০ জন
২০১৫  –     ১ হাজার ৭ জন
২০১৬    –    ১ হাজার ৬ জন
২০১৭    –    ১ হাজার ১৯৩ জন
২০১৮    –    ৯৪২
২০১৯    –    জানুয়ারী মাসেই ৫২ জন

[তথ্যসূত্র: বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ]

আজ পরিবার থেকে শুরু করে প্রতিটি ঘরে ঘরে শুধু অনৈক্য আর ভাঙন। সম্পর্কের ভীতগুলো হয়ে গেছে নড়বড়ে। মানুষ আজ দিশেহারা, পথহারা। সে সভ্যতার দম্ভে বুক ফুলিয়ে থাকলেও ভেতরে ভেতরে কুকঁড়ে মরছে। তার আতœা আজ ত্রাহীসুরে চিৎকার করছে একটু শান্তির জন্য। সামগ্রিক জীবন থেকে ধর্মকে বাদ দেওয়ার পরিণতি তারা আজ হারে হারে টের পাচ্ছে।
অষ্টম হেনরীর সময় ইংল্যান্ডের প্রথম যখন আনুষ্ঠানিক ভাবে সার্বিক জীবন থেকে ধর্মকে বাদ দিয়ে ব্যক্তিগত জীবনে নির্বাসিত করা হলো তখন মানুষ নিজে তার সার্বিক জীবন পরিচালনার ভার তার হাতে তুলে নিল। জন্ম হলো ধর্ম নিরপেক্ষতার। এরপর থেকে এখন পর্যন্ত একের পর এক মানুষের তৈরী জীবনব্যবস্থা মানুষ তাদের সামাজিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিসহ সামষ্টিক জীবনের সকল ক্ষেত্রে প্রয়োগ করে আসছে। কিন্তু কোনো জীবনব্যবস্থাই কাঙ্খিত শান্তি দিতে পারে নি। শান্তির জন্য পাগলপারা জনগণ একের পর এক জীবনব্যবস্থা প্রণয়ন করছে, সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য নতুন নতুন আইন রচনা করা হচ্ছে, আইনের সংশোধন করা হচ্ছে, বিশ্বের বিখ্যাত ব্যক্তিত্বরা শান্তির জন্য সভা-সমাবেশ করছে, আলোচনা করছে, শান্তিসংঘ খুলছে কিন্তু শান্তি নেই। কোথাও শান্তি নেই। রাজতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, একনায়কতন্ত্র, গণতন্ত্র, পুঁজিবাদসহ একে একে সকল তন্ত্র মন্ত্র ব্যর্থ হয়েছে। কেউ শান্তি দিতে পারেনি। মানুষ আজ হারে হারে ভোগ করছে ভুল সমাজব্যবস্থার পরিণতি।
তাই মানুষের সামনে এখন দুটি পথ খোলা আছে, হয় তারা এভাবে এই ব্যর্থতা, গ্লানি নিয়ে এই ভুল জীবনব্যবস্থাতেই বসবাস করবে এবং চূড়ান্ত ধ্বংসের জন্য অপেক্ষা করবে অথবা আল্লাহর শেষ রসুল হুজুরেপাক (সা.) এর উপর প্রেরিত আল্লাহর দেওয়া জীবনব্যবস্থা সমাজে প্রতিষ্ঠা করে চূড়ান্ত শান্তি প্রতিষ্ঠা করবে। তাই মানুষকে আজ সিদ্বান্ত নিতে হবে। ধ্বংসের দাঁড়প্রান্তে দাড়িয়ে বাঁচার শেষ সিদ্বান্তটি নেওয়ার এখনই মোক্ষম সময়।

লেখাটি শেয়ার করুন আপনার প্রিয়জনের সাথে

Email
Facebook
Twitter
Skype
WhatsApp
সার্চ করুন

যুক্ত হোন আমাদের ফেসবুক পেজের সাথে...