হেযবুত তওহীদ

মানবতার কল্যাণে নিবেদিত

দাজ্জালের চাওয়া: ধর্ম যার যার সার্বভৌমত্ব দাজ্জালের

মমাননীয় এমামুযযামানের লেখা থেকে সম্পাদিত

রসুলাল্লাহ দাজ্জাল সম্পর্কে সে সকল ভবিষ্যদ্বাণী করে গেছেন তার সত্যায়ন হলো এই যে, দাজ্জাল হচ্ছে বর্তমানের ইহুদি-খ্রিষ্টান সভ্যতা, তার বাহন হচ্ছে যান্ত্রিক প্রযুক্তি (Scientific Technology), যে বাহনের হাতে, শরীরে অজস্র যুদ্ধাস্ত্র, বোমারু বিমান, যুদ্ধ-জাহাজ, ট্যাঙ্ক, কামান, ক্ষেপণাস্ত্র এবং আণবিক বোমা ইত্যাদি। এই অস্ত্রের শক্তিতে মহা-শক্তিধর হয়ে সে মানবজাতিকে বলছে, তোমরা আমাকে প্রভু (রব) বলে স্বীকার করো, আমার আদেশ পালন করো, এবং তোমরা স্রষ্টার সার্বভৌমত্ব (উলুহিয়াহ্) ত্যাগ করে মানুষের সার্বভৌমত্ব গ্রহণ করো। স্রষ্টার সার্বভৌমত্ব অনেক পুরানো ব্যাপার, ওটা অকেজো হয়ে গেছে। তবুও তোমরা যার যার ধর্ম পালন করো কোন সমস্যা নেই। মুসলমান, তোমরা যত খুশি লম্বা দাড়ি রেখে, মোছ কেটে ফেলে, পাজামা হাঁটু পর্যন্ত টেনে উঠিয়ে মসজিদে দৌঁড়াও, সেখানে ঘণ্টার পর ঘণ্টা নামায পড়ো, আমার কোন আপত্তি নেই; খ্রিষ্টান, তুমি লম্বা জোব্বা পোরে, গলায় ক্রুশ ঝুলিয়ে, গীর্জায় যেয়ে যত খুশি নীতি-বাক্য, বক্তৃতা করতে চাও কর, আমার কোন আপত্তি নেই; বৌদ্ধ, তুমি গেরুয়া বসন গায়ে দিয়ে, মাথা ন্যাড়া করে, ভিক্ষা করে খাবার সংগ্রহ করে প্যাগোডায় যেয়ে বুদ্ধের মুর্তির সামনে বোসে যত খুশি ‘বুদ্ধং স্বরণং গচ্ছামী, সংঘং স্বরণং গচ্ছামী’ গাও কোন আপত্তি নেই; হিন্দু, তুমি নামাবলি গায়ে দিয়ে কপালে সিঁদুর আর চন্দনের ফোটা দিয়ে তোমাদের হাজারো রকম মন্দিরের যেটায় খুশি যেয়ে হাজারো রকম মুর্তির সামনে বোসে ঘণ্টা বাজাও, কোন আপত্তি নেই; ইহুদি, তোমরা লম্বা আলখাল্লা গায়ে দিয়ে মাথায় উঁচু টুপি পোরে, বুকে ডেভিডের স্টার ঝুলিয়ে সিনাগগে যেয়ে প্রার্থনা কর, কোন আপত্তি নেই। আপত্তি তো নেই-ই, বরং এগুলো তোমরা যতো বেশি করবে আমি ততো খুশি হবো; কারণ তোমরা ওগুলো নিয়ে যতো বেশি ব্যস্ত থাকবে আমি ততো নিরাপদ হবো।
কিন্তু সাবধান! কখনো সার্বভৌমত্বের ব্যাপারে প্রশ্ন তুলো না, ও ব্যাপারে ফায়সালা হয়ে গেছে। আমি মানবজাতিকে বাধ্য করেছি আমাকে প্রভু (রব) বলে মেনে নিতে; অর্থাৎ আমার উপদেশ মেনে নিতে। আমার উপদেশই আমার আদেশ। এবং তাদের সামষ্টিক জীবনে অর্থাৎ রাষ্ট্র, আর্থ-সামাজিক জীবনে মানুষকে সার্বভৌম (এলাহ্) বলে মেনে নিতে বাধ্য করেছি। যদি কোনও ব্যক্তি বা দল আমার উপদেশ অর্থাৎ আদেশের বিরুদ্ধাচারণ করে তবে সেই ব্যক্তি বা দল যেই রাষ্ট্রের বাসিন্দা সেই রাষ্ট্রের সরকারকে আমার অসন্তুষ্টি জানিয়ে দিলেই আমার মেজাজ খুশি রাখার জন্য সেই রাষ্ট্রের সরকার তার সর্বশক্তি নিয়ে সেই ব্যক্তি বা দলের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে সেটাকে ধ্বংস করে দেয়; আমার কিছুই করতে হয় না। আর যদি কোন রাষ্ট্র আমার আদেশ মানতে গড়িমসি করে বা অমান্যই করে তবে প্রথমত আমি সে রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা (Sanction) আরোপ কোরি। যেহেতু পৃথিবীর সমস্ত রাষ্ট্রই আমার প্রভুত্বকে (রবুবিয়াহ্) ও মানুষের সার্বভৌমত্বকে স্বীকার করে নিয়েছে, সেহেতু তারা আমার উপদেশ (আদেশ) অনুযায়ী সে রাষ্ট্রের সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্য, যোগাযোগ বন্ধ করে দিয়ে সেটাকে প্রচণ্ড অসুবিধার মধ্যে নিক্ষেপ করে। তাতে যদি কাজ না হয় তবে আমি সে রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে অবরোধ (Embargo) স্থাপন কোরি। বাকি পৃথিবীর সঙ্গে সেটার সমস্ত রকম সম্পর্ক কেটে দিয়ে সেটাকে চারদিক থেকে অবরুদ্ধ করে দেই।
এতেও যদি সে রাষ্ট্র আমার প্রভুত্ব ও মানুষের সার্বভৌমত্বের কাছে আত্মসমর্পণ না করে তবে আমি সেটাকে সামরিকভাবে আক্রমণ করে সে রাষ্ট্র দখল করে নিয়ে সেখানে আমার আনুগত্য ও মানুষের সার্বভৌমত্ব স্বীকারকারী সরকার স্থাপন কোরি। এই প্রক্রিয়ায় ঐ রাষ্ট্রের লক্ষ লক্ষ মানুষ আমার বোমা, ক্ষেপণাস্ত্র, কামানের হামলায় নিহত হয়। কোটি কোটি শিশু, বৃদ্ধ-বৃদ্ধা পঙ্গু, বিকলাঙ্গ হয়। সে দেশের সমস্ত স্থাপনা ধ্বংস হয়। এ সত্ত্বেও আমাকে তা করতে হবে কারণ সমস্ত পৃথিবীতে আমার প্রভুত্ব (রবুবিয়াহ্) ও স্রষ্টার সার্বভৌমত্বকে (উলুহিয়াহ্) হটিয়ে মানুষের সমষ্টিগত জীবনে মানুষেরই সার্বভৌমত্বকে প্রতিষ্ঠা আমার অঙ্গীকার, আমার ক্রুসেড (Crusade)। এ ক্রুসেডে আমি ইতোমধ্যেই সার্বভৌমত্বের ব্যাপারে বিশ্বজয়ী হয়েছি। মানুষের সার্বভৌমত্ব সর্বত্র প্রতিষ্ঠা হয়েছে। স্রষ্টার সার্বভৌমত্ব (উলুহিয়াহ্) আর কোথাও নেই। কিন্তু আমার প্রভুত্বকে (রবুবিয়াহ্) এখনো কিছু কিছু রাষ্ট্র সম্পূর্ণভাবে মেনে নিতে অস্বীকার করছে। তাদের মধ্যে কিছু রাষ্ট্রকে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে ও পরে অবরোধ করেও বাগ মানাতে না পেরে তাদের সামরিকভাবে আক্রমণ করে পরাজিত করে আমার অবাধ্য সরকার ভাগিয়ে দিয়ে সেখানে আমার একান্ত অনুগত সরকার ক্ষমতায় বোসিয়েছি। আরও যদি কোন রাষ্ট্র আমার প্রভুত্ব মানতে রাজি না হয় তবে তাদেরও দশা ঐ দুই রাষ্ট্রের মতোই হবে।
দাজ্জালের এই দাবি, এই হুকুমের বিরুদ্ধে বলার বিশেষ কিছুই নেই। বাস্তবতাকে (Reality) স্বীকার করে নিয়ে হিসাব করলে দেখা যায় যে স্রষ্টা আল্লাহর সার্বভৌমত্ব (উলুহিয়াহ, লা এলাহা এল্লা আল্লাহ) ও মানুষের সার্বভৌমত্বের দ্বন্দ্বে ইতোমধ্যেই আল্লাহর সার্বভৌমত্ব পরাজিত হয়ে গেছে। কারণ অতি সরল যার সঙ্গে দাজ্জালের দ্বন্দ্ব অর্থাৎ আল্লাহর সার্বভৌমত্বের রক্ষাকারী মুসলিম বলে পরিচিত জনসংখ্যাটি, ‘লা এলাহা এল্লা আল্লাহ’ কলেমার ভুল অর্থ করে এলাহ শব্দের অর্থকে একমাত্র হুকুমদাতার বদলে একমাত্র উপাস্য বলে রূপান্তর করে সমষ্টিগত, জাতীয় জীবনে আল্লাহর প্রতিটি আদেশকে প্রত্যাখ্যান করে, ইহুদি-খ্রিষ্টানদের আদেশ প্রতিপালন করে, পৃথিবীময় লক্ষ লক্ষ চাকচিক্যময় মসজিদ তৈরি করে তাতে মহা-ধুমধাম করে এবাদত করে দাজ্জালের সার্বভৌমত্বকে মেনে নিয়ে তার পক্ষ হয়ে গেছে। এই জনসংখ্যাটি যে এমন করবে তা আল্লাহর রসুল বহু পূর্বেই ভবিষ্যদ্বাণী করে গেছেন [আবু সাঈদ খুদরী (রা:) থেকে- শারহে সুন্নাহ], এমন কি আল্লাহর সার্বভৌমত্বের কেন্দ্র ও তাঁর নবীর মদিনার অভিভাবক রাজশক্তিটি পর্যন্ত দাজ্জালের পায়ে সাজদায় অবনত হয়ে গেছে, তার আদেশ প্রাণপণে পালন করে চোলেছে। না করলে দাজ্জালের আদেশে তার সিংহাসন হারাবার ভয় আছে। অনুরূপ অবস্থা মধ্যপ্রাচ্যের সবগুলি রাজতন্ত্র ও আমীরতন্ত্রের। এ তন্ত্রগুলিও মানুষের সার্বভৌমত্বের অঙ্গীভূত। এরা সব এখন দাজ্জালের শক্তি বলয়ের মধ্যে আবদ্ধ। এর বাইরে যে মুসলিম নামের জনসংখ্যা রয়েছে সেগুলির শাসকশ্রেণি মানুষের সার্বভৌমত্বে বিশ্বাসী অর্থাৎ দাজ্জালের অনুসারী।

লেখাটি শেয়ার করুন আপনার প্রিয়জনের সাথে

Email
Facebook
Twitter
Skype
WhatsApp
সার্চ করুন

যুক্ত হোন আমাদের ফেসবুক পেজের সাথে...