হেযবুত তওহীদ

মানবতার কল্যাণে নিবেদিত

জঙ্গিবাদের উৎপত্তি

জঙ্গিবাদ বর্তমান সময়ের সুতীব্র সমস্যা যাকে ইস্যু হিসেবে ব্যবহার করে পশ্চিমা পরাশক্তিগুলো একে একে মুসলিম দেশগুলোকে ধ্বংস করে দিচ্ছে। কিন্তু এ জঙ্গিবাদের উৎপত্তি মুসলিমদের থেকে হয় নি। ইসলামের সাথে এর কোন সম্পর্ক নেই। তবে ইসলামকে ব্যবহার করে কিছু স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠি এ ঘৃণ্য কাজে লিপ্ত আছে যার ফলে ইসলামকেও আক্রমণ করা হচ্ছে। তারা ইসলামকে ব্যবহার করে নিজেদের স্বার্থ হাসিলের চেষ্টা করছে যার ভুক্তভোগী হচ্ছে সাধারণ মানুষ। জঙ্গিবাদ শব্দটিকে বর্তমানে খারাপ অর্থে ব্যবহার করা হলেও জঙ্গিবাদ শব্দটির শাব্দিক অর্থ ভিন্ন। জঙ্গি শব্দটি মূলত জঙ্গ থেকে এসেছে। জঙ্গ মানে যুদ্ধ ও যে যুদ্ধ করে অর্থাৎ যোদ্ধা সে হল জঙ্গি। একটি সেনাবাহিনীর প্রত্যেক সদস্যই যোদ্ধা। সুতরাং শাব্দিক অর্থে তারা সকলেই জঙ্গি।
কিন্তু বর্তমানের পশ্চিমা পরাশক্তি আমাদের মুসলিমদেরকে শুধু জঙ্গি বলে আখ্যা দিচ্ছে। যদি সন্ত্রাস বিস্তার ও নিরীহ মানুষ হত্যাই যদি জঙ্গি কর্মকাণ্ড হয় তবে মানব ইতিহাসে নিজেরা সবচেয়ে ভয়ংকর দু-দুটো বিশ্বযুদ্ধ ঘটানোর পর মুসলিমদের তারা কী করে জঙ্গি বলে আখ্যা দেয়? তারা এটাকে ইস্যু হিসেবে ব্যবহার করে একে একে মুসলিম দেশগুলোকে ধ্বংস করে দিচ্ছে। তাদের এ আচরণকে কী বলে সংজ্ঞায়িত করা হবে? এগুলো কী জঙ্গিবাদী কর্মকাণ্ড হিসেবে বিবেচিত হবে না?
ইসলামে সন্ত্রাসকে সমর্থন করার তো প্রশ্নই আসে না বরং ইসলামে সন্ত্রাসের শাস্তি ভয়ংকর। আমরা পবিত্র কোর’আন ও হাদিস নিয়ে একটু পড়াশুনা করলেই ইসলামে সন্ত্রাসের যে কোন স্থান নেই তা সহজেই বুঝতে পারব। আল্লাহ পবিত্র কোর’আনে বলেছেন, “যারা আল্লাহ ও তাঁর রসুলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে এবং দেশে হাঙ্গামা সৃষ্টি করার অপচেষ্টা চালায়, নিশ্চয় তাদের সমুচিত শাস্তি হলো তাদেরকে হত্যা করা বা ক্রুশে দিয়ে মারা অথবা তাদের হাত-পা বিপরীত দিক থেকে কেটে ফেলা কিংবা তাদেরকে নির্বাসিত করা। এটা হলো তাদের জন্য ইহকালের লাঞ্ছনা এবং পরকালেও রয়েছে তাদের জন্য এক মহা আজাব (সুরা আল মায়েদা- ৩৩)।”
মহনবী (স.) বলেছেন, “কোন মুসলমানের বিরুদ্ধে অস্ত্রধারী ব্যক্তি মুসলিম উম্মাহর অংশ নয়।” অন্য হাদিসে তিনি বলেন, “তোমাদের মধ্যে কেউ যেন অন্য মুসলিম ভাইয়ের প্রতি অস্ত্র দ্বারা হুমকি না দেয়। কারণ হতে পারে তার অনিচ্ছা সত্তে¡ও শয়তান তার মাধ্যমে আঘাত হানার ফলে হতাহতের ঘটনা ঘটাবে। অতএব সেই অপরাধের কারণে সে জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হবে।” এছাড়াও রসুলাল্লাহ বলেছেন, “আল্লাহর সমগ্র দুনিয়া ধ্বংস হওয়া থেকেও গুরুতর অপরাধ হচ্ছে কোন মুসলিম ব্যক্তিকে হত্যা করা।”
সুতরাং এটা সুস্পষ্ট যে আল্লাহ স্বয়ং সন্ত্রাস সৃষ্টিকারীদের জন্য ইহকালেই কঠিন শাস্তি প্রদানের হুকুম করেছেন এবং পরকালেও তাদের জন্য রেখেছেন মর্মন্তুক শাস্তি। রসুলাল্লাহ (স.) বারবার জাতিকে সতর্ক করে দিয়েছেন হত্যা ও বিশৃঙ্খলা না করার জন্য, সন্ত্রাস না করার জন্য। পৃথিবীতে যত রাষ্ট্র রয়েছে সে সবগুলোতেই সন্ত্রাসের জন্য শাস্তির ব্যবস্থা রয়েছে। কোনো দেশে দশ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড বা কোনো দেশে যাবজ্জীবন। আবার কোনো দেশে সর্বোচ্চ শাস্তি হিসেবে ফাঁসির ব্যবস্থাও রয়েছে। কিন্তু এ সকল শাস্তি বেশি কঠোর নাকি আল্লাহর দেওয়া শাস্তি বেশি কঠোর? বিবেচনাবোধ সম্পন্ন মানুষের জন্য এটুকু বিবেচনা করাই যথেষ্ট বলে মনে করি।
আল্লাহ মানুষকে সৃষ্টি করেছেন এবং তার মধ্যে নিজের রূহ ফুঁকে দিয়েছেন (সুরা হিজর: ২৯)। এ মানুষকে সৃষ্টির সময়ই মালায়েকরা বলেছিল যে এরা ফাসাদ ও সাফাকুদ্দিমা অর্থাৎ অন্যায়-অশান্তি ও রক্তপাত করবে। তবুও আল্লাহ আমাদের সৃষ্টি করেন। ইবলিস চায় আমরা যেন অন্যায়-অশান্তি ও রক্তপাতে নিমজ্জিত হই। ইবলিস আমাদের প্রকাশ্য শত্রু যা পবিত্র কোর’আনে বারবার ঘোষিত হয়েছে। তাই এ প্রকাশ্য শত্রু থেকে রক্ষার জন্য আমাদের সচেষ্ট হতে হবে। মানুষের কারণেই সে আল্লাহর নৈকট্য থেকে বিতাড়িত হয়েছে তাই সে মানুষকেও আল্লাহর নৈকট্য পেতে দেবে না বলে চ্যালেঞ্জ করেছে। এ কারণে তার কর্মপন্থা হলো মানুষকে দিয়ে সে ফাসাদ ও সাফাকুদ্দিমা করাবে। সে এই চ্যালেঞ্জ করে নি যে সে মানুষকে দিয়ে আল্লাহর উপাসনা, গুণকীর্তন, জিকির-আসকার করতে বাধা দেবে, নামাজ পড়তে, রোজা রাখতে বাধা দেবে। তার চ্যালেঞ্জ ছিল একটাই, সে মানুষকে আল্লাহর হুকুমের আনুগত্য করতে দেবে না, সে মানুষকে দিয়ে বিধান রচনা করাবে, মানুষকে মানুষের বিধাতার আসনে বসাবে, আল্লাহকে একমাত্র এলাহ (বিধাতা) হিসাবে মানতে দেবে না। আজ ইবলিস সেটাই করেছে, মানুষ নামাজ রোজা কম করছে না কিন্তু হুকুম বিধান মানছে পাশ্চাত্য সভ্যতার। এখনও যদি তাদের বোধোদয় না হয় তাহলে মুসলিম জাতির উভয়জীবনে ধ্বংস ছাড়া আর কোনো গতি নেই।
[সম্পাদনায়: মুস্তাফিজ শিহাব, সহকারী সাহিত্য সম্পাদক, হেযবুত তওহীদ]

সার্চ করুন

যুক্ত হোন আমাদের ফেসবুক পেজের সাথে...