হেযবুত তওহীদ

মানবতার কল্যাণে নিবেদিত

ঘুমিয়ে থাকাই কলিকাল এগিয়ে চলার নামই সত্য-যুগ

রাকীব আল হাসান

‘ঘুমিয়ে থাকাই ‘কলিকাল’ জাগিলেই দ্বাপর, উঠে দাঁড়ানো ত্রেতা এবং এগিয়ে চলার নামই সত্য-যুগ। অতএব অগ্রগামী হও, অগ্রগামী হও (ঋগ্বেদ-ঐতরেয় ব্রাহ্মণ)।
আমরা আজ এমন কাল ঘুমে ঘুমিয়েছি যে আমাদের চোখের সামনে হাজারও অন্যায় হতে দেখেও আমরা নীরব থাকি, অন্যায়ের প্রতিবাদ করি না, অন্যায়ের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হই না। আমরা সমাজের চিন্তা, দেশের চিন্তা, বিশ্বমানবতার চিন্তা বাদ দিয়ে শুধু আত্মচিন্তায়, স্বার্থচিন্তায় বুদ হয়ে আছি। আমাদের এই কাল ঘুমই ডেকে এনেছে ঘোর কলিযুক। এই যুগে পাপাচার ও পাপী দুটোই সত্য ও সততাকে ছাপিয়ে সৃষ্টির বিনাশ ডেকে আনবে বলে আমরা জানি। ভাগবতে বলা আছে ছলনা, মিথ্যা, আলস্য, নিদ্রা, হিংসা, দুঃখ, শোক, ভয়, দীনতা প্রভৃতি হবে এযুগের বৈশিষ্ট। সন্তান মাতা-পিতাকে মানবে না। পুত্র পিতৃহত্যা বা পিতা পুত্র হত্যা করতে টুণ্ঠিত হবে না। আজ আমাদের সমাজেও তা-ই হচ্ছে।
জনাকীর্ণ পরিবেশে একজন মানুষকে পিটিয়ে-পিটিয়ে হত্যা করা হচ্ছে, কেউ তার জীবন রক্ষায় এগিয়ে আসছে না। হামলা প্রতিহত করা তো দূরের কথা, হামলাকারীরা চলে যাওয়ার পর আহত লোকটিকে যে হাসপাতালে নেবে, সে ন্যূনতম দায়িত্ববোধও মানুষ দেখাচ্ছে না। আমরা দেখেছি পকেট মার বা ছিঁচকে চোর বাগে পেলে কী হিংস্র আক্রোশে তাকে নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করে এই কলিযুগের মানুষ। সাম্প্রদায়িক দাঙ্গাতেও তারা দুর্বলের বিরুদ্ধে ভয়াবহ নিষ্ঠুরতা দেখাতে পারে। কিন্তু যখন জনসমাগমপূর্ণ স্থানে সকলের চোখের সামনে মাত্র দু’-একজন সন্ত্রাসী বোমাবাজী করে মানুষ হত্যা করছে, দেশের সম্পদ ধ্বংস করছে, ধারালো অস্ত্র দিয়ে মানুষকে হত্যা করছে এমনকি জনগণের নিরাপত্তাদানকারী প্রশাসনের লোকদেরকেও পিটিয়ে হত্যা করা হচ্ছে অথচ তাদেরকে প্রতিরোধ না করে আক্রান্ত মানুষগুলোকে অসহায় অবস্থায় ফেলে রেখে শত শত মানুষ ঊর্ধ্বশ্বাসে দৌড়াচ্ছে, পালাচ্ছে। এমন দৃশ্য বাঘের আক্রমণে ভেড়ার পালের বেলায় মেনে নেওয়া গেলেও মানুষের বেলায় কীভাবে মানা যায়? তার তো কথা ছিল নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে হলেও অন্যের বিপদে এগিয়ে আসার। কথা ছিল সমাজের একটি মানুষের দুঃখ, দুর্দশায় পুরো সমাজের অন্তরাত্মা কেঁপে উঠার। তাহলে কীসে মানুষকে তাদের দায়িত্ব পালন থেকে বিরত রাখছে? এর কারণ হলো আমরা হিন্দু-মুসলমান-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান সকলেই ধর্মের মূল শিক্ষাকে বাদ দিয়ে শুধুমাত্র কিছু উপাসনা ও আনুষ্ঠানিকতাকে আকড়ে ধরে বসে আছি। ধর্মের মূল যে মানবতা সেই মানবতা, মনুষ্যত্বের কথা চিন্তা না করে আমরা কেবল ব্যক্তি জীবনে কিছু উপসনাকেই ধর্মজ্ঞান করছি, সেটাই মেনে চলার চেষ্টা করছি। কিন্তু সামষ্টিক জীবনে ধর্মহীন বস্তুবাদী পাশ্চাত্য সভ্যতার জীবনধারাকে পদে পদে অনুসরণের চেষ্টা করছি। পশ্চিমা বস্তুবাদী ‘সভ্যতা’র প্রভাবে অনাদিকাল থেকে সহযোগিতার ভিত্তিতে পরিচালিত মানবসমাজ এখন পরিচালিত হচ্ছে স্বার্থচিন্তা ও আর্থিক লেনদেনের ভিত্তিতে। কিন্তু সমাজের এই দিক পরিবর্তনের সাথে সাথে যে সকলের ভাগ্যও পরিবর্তিত হচ্ছে, সকলের জীবনও যে অনিরাপদ হয়ে উঠছে সে হিসাব রাখছেন কয়জন? অন্যায়, অবিচার, হিংসা, বিদ্বেষ, রক্তপাত সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে বাসা বেঁধেছে, ভবিষ্যৎকে করছে আরও বিপজ্জনক। মানবসমাজে পারস্পরিক আস্থা বিকল্পহীন একটি অমূল্য সম্পদ, অথচ আজ কেউ কাউকে বিশ্বাস করে না। এখন আমরা যদি এই ঘোর কলিযুগকে পায়ে পিষে দ্বাপর জুগকে অতিক্রম করে ত্রেতা যুগের উপর দিয়ে সত্যযুগ আনতে চাই তবে এখন আমাদেরকে সকল অন্যায়ের বিরুদ্ধে জেগে উঠতে হবে, দাঁড়াতে হবে, এগিয়ে যেতে হবে, অগ্রগামী হতে হবে। সনাতন ধর্মমতে ঘোর কলিযুগের পর আবার সত্যযুগ আসবে। সেই সত্যযুগ আমরাই আনতে পারি। অবতার শ্রীকৃষ্ণ (যাকে অনেকে ভগবানও বলে থাকেন) মহাভারতে পঞ্চপাণ্ডবদের উদ্দেশ্যে বলেন, সংসারে যখন দুঃখ বৃদ্ধি পায়, সংসারে স্বল্প মানুষ সুখ অনুভব করে আর অধিকতর মানুষ দুঃখ অনুভব করে তখন সংসার রোগগ্রস্ত হয়ে পড়ে। এরূপ সময় সেই রোগের নিরাময় করতেই হয়। নিজে নিজেকে বলিদান দিয়েও অধর্মের বিনাশ করা অনিবার্য হয়ে পড়ে। এরূপ সময় না সম্পর্ক গুরুত্বপূর্ণ আর না প্রেম গুরুত্বপূর্ণ। না তো স্বার্থ দেখতে হয় আর না সুখের আশা করতে হয়। এইরূপই সময় এখন আপনাদের সবার সামনে। সিদ্ধান্ত আপনাদের সবার। ফলের স্বাদ বৃক্ষের প্রাপ্তি হয় না, কদাচিৎ সেইরূপে এই বলিদান থেকে আপনাদের লাভ নাও হতে পারে। নিজের হৃদয়ে উকি দাও, এতটা করুণা কি রয়েছে ওখানে, এতটাই কি ধর্ম রয়েছে আত্মায় যে, সমগ্র সমাজের জন্য নিজের বলিদান নিশ্চিত করতে পার। এই বিষয়ে আপনারা সবাই চিন্তা করুন।

লেখাটি শেয়ার করুন আপনার প্রিয়জনের সাথে

Email
Facebook
Twitter
Skype
WhatsApp
সার্চ করুন

যুক্ত হোন আমাদের ফেসবুক পেজের সাথে...