হেযবুত তওহীদ

মানবতার কল্যাণে নিবেদিত

আকীদাহীন ঈমানের পরিণতি!

রাকীব আল হাসান:
বিশ্বময় মুসলমান সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশগুলো একের পর এক জঙ্গিবাদের কবলে পতিত হয়ে যুদ্ধক্ষেত্রে রূপ নিচ্ছে। এই সঙ্কট মোকাবেলায় আমরা দেখছি ট্যাকটিক্যাল স্ট্র্যাটেজি অর্থাৎ শক্তি বা আইন প্রয়োগ করে সমাধানের চেষ্টা করা হচ্ছে। দেখা যাচ্ছে জঙ্গিবাদীদের হাতে যে পরিমাণ মানুষ নিহত হচ্ছে বা ধ্বংসযজ্ঞ হচ্ছে তার চেয়ে বহু বহুগুণ বেশি মানুষ হতাহত হচ্ছে জঙ্গিবাদীদের দমন করতে গিয়ে। কিন্তু (সাবেক) মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা, জাতিসংঘের মহাসচিব বান কি মুন, মার্কিন গোয়েন্দা প্রধান থেকে শুরু করে আমাদের দেশের গোয়েন্দা প্রধান, সামরিক বিশেষজ্ঞগণ, সমাজবিজ্ঞানী, নিরাপত্তাবিশ্লেষক সকলেই বলছেন, শুধু ট্যাকটিক্যালি বা পুলিশি কায়দায় বুলেট বোমা দিয়ে জঙ্গিবাদ মোকাবেলা করা সম্ভব নয়। একে মোকাবেলা করতে হলে একটি পাল্টা আদর্শ বা কাউন্টার ন্যারেটিভ লাগবে যা দিয়ে জঙ্গিবাদীদেরকে ডি-র‌্যাডিকালাইজ, ডি-মোটিভেইট করতে হবে, তাদেরকে সমাজের মূল ধারার সাথে রি-ইন্টিগ্রেটেড করতে হবে। পরিভাষা যাই ব্যবহার করা হোক, আমরা হেযবুত তওহীদ ইসলামের পরিভাষায় এটাকেই বলছি জনগণের সামনে ইসলামের পূর্ণ রূপ, কমপ্রিহেনসিভ কনসেপ্ট বা আকিদা তুলে ধরতে হবে। ইসলাম সম্পর্কে সঠিক আকীদা অর্থাৎ সামগ্রিক ধারণা পেলে তারা বুঝতে পারবে তাদের ভুলটা কোথায় হচ্ছে, কেন তাদের পথ জান্নাতের পথ নয়।
পবিত্র কোর’আন এমন একটি গ্রন্থ যেটার শুরুতেই আল্লাহ বললেন ‘যা লিকাল কিতাবু লা রাইবা ফি’- এ সেই কিতাব যাতে কোনো সন্দেহ নেই। আবার সুরা হিজরে বলেছেন, ‘আমি একে নাজিল করেছি, আমিই সংরক্ষণ করব।’ পৃথিবীতে আল্লাহর পাঠানো সমস্ত কেতাবের মধ্যে একমাত্র আল কোর’আনই এখন পর্যন্ত আনচেঞ্জড, অপরিবর্তনীয় আছে। পৃথিবীর উল্লেখযোগ্য সকল ভাষায় এর অনুবাদ হয়েছে, পরকালের সওয়াবের আশায় হোক বা অন্য কোন কারণে হোক প্রতিদিন কোটি কোটি মানুষ কোর’আন পড়ছে। এমন কোনো মুসলমানের ঘর নেই যেখানে দুই এক কপি কোর’আন নেই। এমন কোনো মসজিদ নেই, মাদ্রাসা নেই যেখানে কোর’আন নেই। কাজেই আল কোর’আনের ব্যাখ্যা যে কেউ যে কোনভাবে দিলেই হবে না। ঐ ব্যাখ্যাকে যাচাই করার যথেষ্ট অবকাশ রয়েছে, ব্যাখ্যাকে গ্রহণযোগ্যও হতে হবে। যেমন- এখানে কোর’আনের কয়েকটি আয়াতের কথা উল্লেখ করব।
আল্লাহ কোর’আনে বলেছেন, ‘তোমাদের জন্য কেতাল ফরদ করে দেওয়া হলো (বাকারা ২১৬)।’ ‘কেতাল চালাও ততক্ষণ পর্যন্ত যতক্ষণ না ফেতনা দূরীভূত হয়ে যায় (বাকারা ১৯৩)। আমি মো’মেনদের জান-মাল কিনে নিয়েছি জান্নাতের বিনিময়ে (তওবা ১১১)। আমি কাফেরদের মনে ভীতির সঞ্চার করে দেব। কাজেই গর্দানের উপর আঘাত হান এবং তাদেরকে কাট জোড়ায় জোড়ায় (সুরা আনফাল ১২)। তোমরা বের হয়ে পড় স্বল্প বা প্রচুর সরঞ্জামের সাথে এবং জেহাদ কর আল্লাহর পথে নিজেদের মাল ও জান দিয়ে, এটি তোমাদের জন্যে অতি উত্তম, যদি তোমরা বুঝতে পার (সুরা তওবা ৪১)।
এইসব আয়াত উল্লেখ করে বলা হয় যে, অমুক সরকার কুফরি সরকার, তাগুত সরকার। আর আল্লাহ কেতাল ফরদ করে দিয়েছেন। সুতরাং এদের বিরুদ্ধে কিতাল করতে হবে। তোমরা কি কেতাল করবে? তখন ওই ধর্মপ্রাণ তরুণরা দেখে যে, সত্যিই তো কোর’আনে কিতালের হুকুম আছে, কাফেরদের সাথে যুদ্ধের হুকুম আছে। তখন তারা জঙ্গিবাদী আদর্শে দীক্ষিত হয়ে যায়। কারণ কিতালের মর্যাদা, শহীদের মর্যাদা অনন্য। এখন এই আয়াতগুলোর কী ব্যাখ্যা দেওয়া হবে? যেনতেন ব্যাখ্যা দিলেই তো হবে না। এই কারণেই দরকার আকীদা। আল্লাহর অসীম করুণা হচ্ছে তিনি হেযবুত তওহীদের প্রতিষ্ঠাতা এমামুয্যামান জনাব মোহাম্মদ বায়াজীদ খান পন্নীকে ইসলামের প্রকৃত আকীদা বোঝার তওফিক দান করেছেন। আমরা সেটাই মানুষের সামনে তুলে ধরছি এবং এটাই যাবতীয় সঙ্কটের একমাত্র যথার্থ সমাধান। কেননা যার আকীদা পরিষ্কার থাকবে সে বুঝবে ঐ আয়াতের নাজেলের প্রেক্ষাপট কী, সেই আয়াতের বিধান বাস্তবায়নের সময় কখন, বাস্তবায়নের অধিকার কার আছে, এর আগে পরে কী কী শর্ত জড়িয়ে আছে ইত্যাদি। আমরা ইতিহাসে দেখি, আল্লাহর রসুল কেবল একজন নবীই ছিলেন না, তিনি বিচারক ছিলেন, রাষ্ট্রনায়ক ছিলেন, আবার সেনাবাহিনীর প্রধান ছিলেন। সুতরাং তিনি একজন রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে রাষ্ট্রীয় বিষয়ে যে পদক্ষেপগুলো নিয়েছেন সেই সুন্নাহ কেবল আরেকজন রাষ্ট্রনায়কই পালন করতে পারেন। তিনি একটি সার্বভৌম রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে সেনাবাহিনী পরিচালনা করেছেন, নিজেও যুদ্ধ করেছেন। তাঁর এই পদক্ষেপগুলো অনুসরণ করার অধিকার রাখে অপর একজন সেনাবাহিনীর প্রধান। তিনি বিচারক হিসেবে অনেক অপরাধীকে দণ্ড প্রদান করেছেন। এই কাজে সমগ্র জাতির সমর্থন পেয়েছেন। সেটাও কেবল আজকের বিচারকদের জন্যই উত্তম আদর্শ হতে পারে। যে কারো অধিকার থাকে না যাকে তাকে দণ্ড দিয়ে দেওয়ার।
আজকে ইসলামের প্রকৃত আকীদা না বোঝার কারণে যারা কিতালের নামে মানুষ খুন করে বেড়াচ্ছে তাদের ঈমান কোনো কাজে আসছে না। বস্তুত তারা পৃথিবীর সমস্ত মানুষকে হত্যা করে ফেললেও দুনিয়াতে শান্তি আনতে পারবে না এবং পরকালেও জান্নাতে যেতে পারবে না। কারণ ওটা আল্লাহ-রসুলের ইসলাম নয় এবং তাদের ঐ পথ ভুল। ভুল পথে ভুল অবলম্বনে কোনোদিন গন্তব্যে পৌঁছানো যায় না।

সার্চ করুন

যুক্ত হোন আমাদের ফেসবুক পেজের সাথে...